কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে শ্রমিকের মজুরির টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। যেসব শ্রমিক টাকার ‘ভাগ’ দিতে চাননি তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে।
ওই তিন ইউপি সদস্য ৪০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে জনপ্রতি দেড় হাজার টাকা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের এক শ দিনের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পে কুতুবজোম ইউনিয়নে প্রায় ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন।
দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিকরা সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করেন।
শ্রমিক নুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, তিন ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ জন শ্রমিকের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে নিয়েছেন তিন মেম্বার। ইউনিয়ন পরিষদের খরচের নাম দিয়ে এসব টাকা তারা নিয়েছেন।
শ্রমিক জালাল আহমদ একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, তাদের কাছ থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জয়নাল আবেদিন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেকাব উদ্দিন ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মাহমুদুল হক এসব টাকা নিয়েছেন।
শ্রমিক শফিউল আলম বলেন, ‘প্রায় ৪২ দিন কাজ করার পর মজুরির ৪ হাজার ৮০০ টাকা পাই। টাকা পাওয়ার খবর পেয়ে স্থানীয় তিন মেম্বার বাড়ি বাড়ি লোক পাঠাচ্ছেন। টাকা আদায় করছেন মেম্বারের লোক মো. করিম নামের এক ব্যক্তি।’
ভুক্তভোগী মো. বদিউল আলম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার নগদ অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা জমা হয়। টাকা পাওয়ার কথা শুনে স্থানীয় মো. করিম নামে এক ব্যক্তিকে বাড়ি পাঠায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জয়নাল আবেদিন। ওই ব্যক্তি দেড় হাজার টাকা দাবি করেন এবং না দিলে শ্রমিকের তালিকা থেকে নাম কেটে দেয়ার হুমকি দেন।’
মো. ওসমান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘ইউপি সদস্য মাহমুদুল করিম শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে আমার বাবার নাম্বারে কল দেন। আমার পরিবারের দেয়া দুটি কার্ড থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে তার বাড়িতে যেতে বলেন। না দিলে বাকি এক মাসের টাকা দিবে না বলে জানায়, সেই সঙ্গে শ্রমিকের তালিকা থেকে নাম কেটে দেবে বলে জানায়।’
রশিদ মিয়া বলেন, ‘৫০ জনের একটি দলে আমি কাজ করি। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগদ অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা আসে। করিম নামের এক ব্যক্তি দুপুরে বাড়িতে গিয়েছিল। তখন টাকা ছিল না, সময় নিয়েছি সন্ধ্যায় টাকা দিতে এসেছি। এ ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে কেউ নিলে নিতে পারে। আমার নাম দিয়ে নিচ্ছে কিনা আমি অবগত নই। এসবে আমি জড়িত নই।’
আরেক অভিযুক্ত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহমুদুল হক বলেন, ‘শুনেছি আগের চেয়ারম্যান-মেম্বারেরা ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নিত। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর কারও থেকে নিইনি।’
এ ব্যাপারে কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকদের টাকা তাদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাঠাই। কোনো ইউপি সদস্য যদি টাকা নেয় সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাকে ক্ষুদে বার্তা দিলেও তিনি জবাব দেননি।