বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একের পর এক প্রাণীর মৃত্যু: সাফারি পার্কে বসছে সিসি ক্যামেরা

  •    
  • ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২২:১৪

জানুয়ারি থেকে একের পর এক পার্কে মারা গেছে ১১টি জেব্রা এবং একটি করে বাঘ ও সিংহী। পার্কের অব্যবস্থাপনা, পার্কের কর্মকর্তাদের কোন্দলসহ নানা খবর প্রকাশের পর পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে রোববার পার্কটি পরিদর্শন করেন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।

একের পর এক প্রাণীর মৃত্যু, আরও কয়েকটির অসুস্থ হয়ে পড়া, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাণীর মৃত্যুর তথ্য গোপনসহ নানা ঘটনায় তোলপাড়ের মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ঘোষণা এসেছে।

দেশের বৃহৎ এই সাফারি পার্কের টালমাটাল পরিস্থিতিতে রোববার বিকেল ৪টায় সাফারি পার্ক পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। পার্কে প্রবেশের পর দুই দফায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে তিনি এ কথা জানান।

পার্কে প্রাণী মৃত্যুর ঘটনা কেন গোপন করা হলো- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সিসি ক্যামেরা লাগাব। আর মৃত্যুর ঘটনা গোপন যদি করা হয়ে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেন মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করা হলো সেই রহস্য উদ্ঘাটন করব।’

মন্ত্রী এই বক্তব্য দেয়ার আগে একই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ‘সাফারি পার্কে প্রথমে আটটি জেব্রা মারা গেলেও মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তা জানানো হয়নি।’জানুয়ারি থেকে একের পর এক পার্কে মারা গেছে ১১টি জেব্রা এবং একটি করে বাঘ ও সিংহী। পার্কের অব্যবস্থাপনা, পার্কের কর্মকর্তাদের কোন্দলসহ নানা খবর প্রকাশের পর পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ১০ দিনের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এরই মধ্যে পার্কের প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের স্থলে দায়িত্ব নিয়েছেন নতুন তিন কর্মকর্তা।

এর মধ্যে মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে পার্কের কর্মকর্তাদের গাফিলতি, বিশেষজ্ঞদের ১০ দফা পরামর্শের বাস্তবায়নসহ নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়। তবে ঘুরেফিরে সব প্রশ্নের উত্তর ছিল অনেকটা দায়সারা।

মন্ত্রীর উত্তর, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিকেল ৪টায় সাফারি পার্কে পরিদর্শনে আসেন মন্ত্রী। এ সময় গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, পার্কের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা রেজাউল করিম, পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে পার্কের হাতির পালের দুটি হাতিকে সুসজ্জিত করে রাখা হয়।

পরে পার্কের ঐরাবতি বিশ্রামাগারের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রাণী মৃত্যুর ঘটনায় আমরা পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তারা রিপোর্ট প্রদান করবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‘সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে সাফারি পার্কের তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত আছে বা কারও ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে এসেছি সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য। আমরা যেসব স্থানে জেব্রা, বাঘ ও সিংহী মারা গেছে সেসব স্থান পরিদর্শন করব। এরপর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর সেই রিপোর্টের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সাফারি পার্ক পরিদর্শনে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। ছবি: নিউজবাংল

পরে মন্ত্রী সাফারি পার্কের অভ্যন্তরের মারা যাওয়া প্রাণীদের আবাস্থল ও ব্যবস্থাপনা পরিদর্শনে যান।

এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ ও সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শন শেষে সাফারি পার্কের তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্রে আবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী। নানা প্রশ্নের মুখে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ প্রথমে বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বড় আশা নিয়ে গাজীপুরে দেশের প্রথম সাফারি পার্ক তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কিছু প্রাণীর মৃত্যু সারা দেশের মানুষকে ব্যথিত করেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘পরিদর্শন শেষে মনে হয়েছে এটা একটি সমৃদ্ধ পার্ক। তবে এর আরও উন্নয়ন প্রয়োজন।...তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার আগে আমরা কোনো কিছুই বলতে পারব না। আজকে আমরা পরিদর্শন করে যা দেখেছি তা বুকের ভেতর ধারণ করব এবং তদন্ত প্রতিবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

পার্কে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর পর বিশেষজ্ঞরা ১০টি পরামর্শ দেন। সেসব পরামর্শের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি- এমন মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পার্কের প্রাণীদের খাবার সরবরাহের জন্য কর্মকর্তা দায়িত্বরত আছেন৷ তারা খাবার সরবরাহের আগে খাদ্যে বিষ কিংবা অন্য কোন জীবাণু আছে কি না তা যাচাই করে খাবার সরবরাহ করবেন। যদি খাদ্যে বিষক্রিয়ার কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়ভার ওই কর্মকর্তাকে নিতে হবে।

‘বিশেষজ্ঞদের ১০ দফা বাস্তবায়নে আমরা আজকেই নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’

পার্ক পরিদর্শনের সময় একটি বাঘ ও সিংহের অসুস্থতার খবর জানানো হয় মন্ত্রীকে। কিন্তু মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পার্কে যেসব প্রাণী দেখেছি, সেগুলো খুবই হৃষ্টপুষ্ট। যেসব প্রাণী অসুস্থ আছে, সেসবের চিকিৎসা চলমান রয়েছে। এর চেয়ে ভালো কোনো চিকিৎসা বা ওষুধের প্রয়োজন হলে সেগুলোও প্রয়োগ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী জানান, তার নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজারে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার একর জায়গায় আরেকটি সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবে। বনের জায়গা যেন বেদখল না হয় সেজন্য বেশি বেশি করে সাফারি পার্ক ও ইকো পার্ক তৈরি করা হবে।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সাফারি পার্কের প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করবে সিআইডি। তাদের ল্যাবে মৃত প্রাণীগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হবে। মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। তারা আমাদের তদন্ত কমিটিকে সহায়তা করবে এবং পরামর্শ দেবে। আমরা সেগুলো বাস্তবায়ন করব।

এ বিভাগের আরো খবর