শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় কমে গিয়েছিল মাটির আর্দ্রতা। এতে পিঁয়াজ বীজ, হালি পিঁয়াজ, গম, মসুর, কালোজিরা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।
ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় চাষিদের চোখমুখে যখন চিন্তার ভাঁজ, ঠিক তখনই মাঘ মাসের হঠাৎ বৃষ্টি ফরিদপুরের চাষিদের কাছে যেন স্বস্তির বার্তা নিয়ে এলো।
এমন বৃষ্টিতে ফিরে এসেছে ক্ষেতের আর্দ্রতা। ফসলও যেন ফিরে পেয়েছে নতুন জীবন। ইরি-বোরো ধানচাষিদের সেচের কাজটি যেন প্রকৃতি নিজেই করে দিয়েছে। ফলে চাষিদের আর বাড়তি টাকা খরচ করে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।
পিঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী নারী উদ্যোক্তা শাহীদা বেগমসহ একাধিক চাষি দাবি করেন, মাঘের বৃষ্টি তাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। আর্দ্রতা না থাকায় তাদের ক্ষেতে মাটির শক্তি কমে গিয়েছিল। সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছিল না। ফলে একরের পর একর জমি নিয়ে বেশ চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন তাদের অনেকেই। সেচের খরচ এখন বেঁচে গেছে।
সালথা উপজেলার বিধান মণ্ডল, সুমন সাহা, রফিকুল ইসলাম, মকবুল কাজী জানান, সাধারণ ফসলের ক্ষেতে সহজেই সেচ দেয়া যায়। কিন্তু পিঁয়াজ বীজের ক্ষেতে সেচ দেয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। গত মৌসুমে প্রখর রোদের কারণে পিঁয়াজ বীজের ফুল-পাতা শুকিয়ে গিয়েছিল। তারপরও সেচ দিতে পারেননি তারা। সেচ না দেয়ার কারণে ফলন অনেক কম হয়েছিল।
তারা বলেন, এ বছর বৃষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ফসল নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।
সদর উপজেলার নরসিংহদিয়ার আদর্শ কৃষক আলম ব্যাপারী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আমি ৪৫ একর জমি চাষাবাদ করেছি। আমার জমিতে এখন আছে বারি ৪ পিঁয়াজ, বারি ৫ পিঁয়াজ, সূর্যমুখী, কালোজিরা, ইরি-বোরো ধান ও গম। প্রতিটি ফসলেই পানির প্রয়োজন ছিল। কিছু জমিতে পানি দেয়াও শুরু করেছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি আমার জমিগুলো ভিজিয়ে দিয়ে গেছে।’
পানি দিতে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে না বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বোয়ালমারীর সুতালীয়া গ্রামের চাষি সুবীর কুমার বিশ্বাস ও মধুখালী উপজেলার গৌতম রায়ও।
সুবীর বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার বৃষ্টিতে আমাদের জমির ফসল নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে।’
এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হজরত আলী বলেন, ‘শীত মৌসুমের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে মাটির আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে এ সময় চাষিদের ফসলের ক্ষেতে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা চাষিদের জন্য আশীর্বাদ। সেচ দিতে হবে না বলে তাদের উৎপাদন খরচ কিছুটা হলেও কমে গেছে।’