পুরান ঢাকার বিচারিক আদালতের নারী হাজতখানার ড্রেসিংরুমে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে দুই যুবকের গোপন বৈঠক হয়েছে।
রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নিচতলায় এ বৈঠক হয়। গণমাধ্যকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে দুজনকে দেখার পর একে ‘তুচ্ছ বিষয়’ বলে উড়িয়ে দেন দায়িত্বরত পুলিশ বাহিনীর এক কর্মকর্তা।
এদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালতে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিল।
সকালে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় পাপিয়াসহ আসামিদের। তাদের ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু পর তাদের এজলাসে তোলা হয়। এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে দুজন সাক্ষীও আদালতে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে বিচারক অসুস্থ হওয়ায় এদিন সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত বিচারক এ এস এম রুহুল ইমরান আগামী ১৬ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী নতুন তারিখ ঠিক করেন। তারিখ পড়ার কারণে আসামিদের আবার হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বেলা ১টার দিকে হাজতখানার সামনে দেখা যায়, পাপিয়া হাজতখানার ড্র্রেসিংরুমে একটি বেঞ্চে বসে আছেন। তার সামনে দুই যুবক বসে নিচুস্বরে কথা বলছেন। পাপিয়া কফি পান করছেন আর তাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
হাজতখাতার গেটে কয়েকজন নারী পুলিশ সদস্যকে পাহারা দিতে দেখা যায়। ধীরে ধীরে খবর পেয়ে আদালতপাড়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হন। বিষয়টি টের পেয়ে হাজতখানার ইনচার্জ নৃপেন কুমার বিশ্বাস সেখানে আসেন।
তিনি পাপিয়াসহ তিনজনকে সতর্ক করেন। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে হাস্যরস করার চেষ্টা করেন। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেন।
তখন সাংবাদিকরা তার কাছে প্রশ্ন রাখেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া এভাবে কোনো আসামির সঙ্গে বৈঠক করা যায় কি না। তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এরপর বলেন, ‘ওই দুজন আমাদের স্পেশাল গেস্ট।’
বিষয়টি নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পাপিয়াকে সেখান থেকে বের করে নারী হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার সঙ্গে বৈঠক করা দুই যুবক বের হন। পাপিয়ার সঙ্গে কী সম্পর্ক জানতে চাইলে প্রথমে কেউ কোনো উত্তর দিতে চাননি। একজন জানান, তার নাম রাসেল। পাপিয়া তার বোন হন। কেমন ভাই- জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে আদালতপাড়া ছেড়ে দ্রুত বেরিয়ে যান।
অন্য যুবক এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি। তিনি দ্রুত আদালত এলাকা ত্যাগ করেন। পরে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত।
এই দম্পতির বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা চলছে। এর মধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলা তদন্তাধীন। বিশেষ ক্ষমতা আইনের তিনটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের এক মামলায় আজ অভিযোগ গঠন করা হয়। জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দণ্ডবিধিতে পৃথক দুটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আরেকটি মাদক আইনের মামলায়ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
কারাগারের ভেতরেও তারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেন বলে অভিযোগ আছে।
যে মামলায় রোববার আদালতে নেয়া হয় পাপিয়া ও তার স্বামীকে, সেটি গত বছরের ৪ আগস্ট করা হয়। দুদক ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থার উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ মামলাটি করেন। এতে পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে ৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
রাজধানীতে একটি পাঁচতারকা হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ ওঠার পর ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, বাংলাদেশি ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ মার্কিন ডলার ও সাতটি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করা হয়।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা, অর্থ পাচারসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হওয়া শামিমা নূর পাপিয়াকে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে যুব মহিলা লীগ। তিনি নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।