করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ে শনাক্তের হারে রেকর্ড করার পরদিন থেকেই পরিস্থিতির যে উন্নতি, তা অব্যাহত আছে। ৩৩ শতাংশের বেশি থেকে শনাক্তের হার ধারাবাহিক কমে ২০-এর কাছাকাছি নেমে এসেছে। টানা সাত দিন পর ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু নেমেছে ৩০-এর নিচে। রোগীর সংখ্যা নেমেছে আট হাজারের ঘরে।
শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত সারা দেশে ৮ হাজার ৩৪৫ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার হয়েছে ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ।
আগের দিন রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৩৫৯। তবে শুক্রবার থেকে ২৪ ঘণ্টায় রোগী সাধারণত কম পাওয়া যায়। এর কারণ সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে নমুনা পরীক্ষা কম হয়। সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা আগের দিন ছিল ২৫-এর বেশি।
এই ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে মোট ২৯ জনের, যা গত আট দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের দিন ৩৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছিল।
গত ২০ জানুয়ারি করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে গত ২৮ জানুয়ারি পরীক্ষা করা নমুনার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশের মধ্যে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণের পর এত বেশি হারে সংক্রমণ ধরা পড়েনি কখনও।
রেকর্ড করার পরদিন থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমছে শনাক্তের হার ও রোগীর সংখ্যা। তবে মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না সেভাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৮ হাজার ৮২১ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় ১০০ জনে বর্তমানের ২১ জনের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এ নিয়ে টানা এক মাস শনাক্তের হার ৫ শনাক্তের ওপর।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৫৩২ জনের দেহে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৬ লাখ ২ হাজার ৫৫০ জন। সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৫৮৯ জনের।
গত এক দিনে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ১৫ ও নারী ১৪ জন। এর মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব ১, চল্লিশোর্ধ্ব ২, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৫, ষাটোর্ধ্ব ১৪, সত্তরোর্ধ্ব ৩ ও অশীতিপর ৪ জন।
বিভাগ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৪ জনের মৃত্যু হয় ঢাকা বিভাগে। এর পরই চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে চারজন করে মৃত্যু হয়। এর পর রয়েছে রংপুর বিভাগ। এই বিভাগে তিনজন মারা গেছেন। ময়মনসিংহে দুজন মারা গেছেন। এ ছাড়া রাজশাহী, সিলেট একজন করে মারা গেছেন।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকা কার্যক্রম শুরু করে সরকার।
গত দুই বছরে দেশে করোনার তিনটি ঢেউ এসেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের একপর্যায়ে দেশে শাটডাউন নামে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ওই সময় বাড়ির বাইরে গেলে জরিমানাও করা হচ্ছিল।
এবার বিধিনিষেধ দিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা প্রতিপালনে তেমন কঠোরতা নেই। তবে টিকাদান কর্মসূচি যথাযথ বাস্তবায়নের কারণে করোনাভাইরাসের মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক কম হচ্ছে।