মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ছয়টি খাল দখল করে ইস্টার্ন হাউজিং প্রকল্প করা হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। খালগুলো নিজেরা উদ্ধার করে তাতে বেইলি ব্রিজ না দিয়ে দিলে প্রতিষ্ঠানটির সব প্রকল্প বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেন তিনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রোববার দক্ষিণ সিটি, উত্তর সিটি, ওয়াসা, রাজউকসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে এক সমন্বয় সভায় এসব কথা বলেন মেয়র আতিকুল।
সভায় বেড়িবাঁধ এলাকায় ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আবাসন প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ তুলে ধরে উত্তর সিটি মেয়র বলেন, ‘আজ একটি বিষয়ে দৃষ্টি না দিলেই নয়, মিরপুর বেড়িবাঁধে এত বড় ইস্টার্ন হাউজিং হলো, নাকের ডগায় ছয়টি খাল তারা বন্ধ করে দিয়েছে।
‘এত বড় সাহস তাদের কীভাবে হলো? খাল বন্ধ করে দুই ফিট করে পাইপ দিয়েছে, আর এখানে ইস্টার্ন হাউজিং ব্যবসা করছে। আমার প্রস্তাব ইস্টার্ন হাউজিংয়ের যত প্রজেক্ট আছে, সব বন্ধ করতে হবে। তাদের বলতে হবে, তোমরা এই খালগুলোয় বেইলি ব্রিজ করে দাও, নিচে দিয়ে যাতে নৌকা যেতে পারে।’
মেয়র বলেন, ‘ডেভেলপার যারা আছে, বড় বড় খাল ছোট পাইপ দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে। আদি খালের ওপর অবশ্যই বেইলি ব্রিজ করে দিতে হবে, না হলে তাদের কোনো অনুমতি দেয়া যাবে না। এখন তারা মনে করছে তারা কাজ করবে আর আমরা সরকারি টাকায় ব্রিজ বানাব। এটা হবে না। তারা তো ইনকাম করছে, এটা তাদের দায়িত্ব।’
আতিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ দেশের কি মা-বাপ বলে কেউ নেই? দেখার কেউ নেই?’
মিরপুরের মতো মোহাম্মদপুরের বছিলাতেও খাল দখল করে স্থাপনা তৈরির অভিযোগ আনেন আতিক। বছিলায় খাল দখলের অভিযোগ তিনি তুলেছেন বেসরকারি ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও।
মেয়র বলেন, ‘বছিলায় রামচন্দ্রপুর খালের ওপর বিল্ডিং করে ফেলল ইউল্যাবের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়, তারাও খালের ওপর ভবন করে ফেলল।
‘আমরা এখন এসব কিছুর ম্যাপিং করছি, এরপর আমি আপনার কাছে দেখাব কতগুলো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এগুলো কিন্তু আমাদের ভেঙে ফেলতে হবে।’
অবশ্য প্রকল্প বন্ধ করার পক্ষে নন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি খালগুলো পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রকল্প বন্ধ করব না। তারা যে অনিয়ম করেছে সেটার জন্য তাদের সরে যেতে হবে। সিটি করপোরেশন এ কাজটা করবে। আমরা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আছি। আগামী বর্ষায় যাতে কোনো জলাবদ্ধতা না হয়।’
মেয়রের আনা অভিযোগ সম্পর্কে কথা বলতে নিউজবাংলার প্রতিবেদক ইস্টার্ন হাউজিং গ্রুপের ল্যান্ডফোনে ফোন করেন। তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে জানানো হয়, তিনি বাইরে আছেন। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলা হয় তিনি দুপুরের খাবার খেতে গেছেন।
পরে প্রতিষ্ঠানটির আইনি শাখায় কথা বলতে চাইলে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রেখে এক ব্যক্তি ফোন ধরেন।
তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের আনা অভিযোগগুলো শোনেন তিনি। নিউজবাংলার প্রতিবেদকের নাম, ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। জানান, তথ্য দেয়ার জন্য এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন তিনি।
পরে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এ বিষয়ে যদি আমাকে কমেন্টস করতে হয়, আমাকে আমাদের সাইট অফিসে জিজ্ঞেস করতে হবে, এমন কিছু আমরা করেছি কি না। দেখা যায়, প্লট-জমি আমাদের নামে থাকে, কিন্তু আসলে আমরা বেচে দিই। আমরা অনেক বড় বড় প্রজেক্ট করি তো; বেচে দেয়ার পর দেখা গেল অন্য কেউ কিছু করেছে। বাট ইস্টার্ন হাউজিং কখনও কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত না। সে বিষয়টা আগে দেখব, বুঝব, তারপর কমেন্ট করব। আন্দাজে কোনো কমেন্ট করা যাবে না।’
এসব কথা বললেও নিজের নাম বলতে চাননি ইস্টার্ন হাউজিংয়ে কর্মরত ওই ব্যক্তি। নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লিগ্যাল শাখায় কাজ করেন তিনি।’
পরে আবারও নাম জানতে চাইলে তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দেন ওই ব্যক্তি।