টানা দুই রোববার দরপতনের পর এবার সপ্তাহ শুরু হলো সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে। খাতভিত্তিক হিসাব করলে অর্থবছর শেষ করে লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা বিমাখাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। তবে সূচক বৃদ্ধিতে প্রধানত ভূমিকা রেখেলে দুই বড় মূলধনি কোম্পানি ওয়ালটন ও ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি।
রোববার ৪০ পয়েন্ট বাড়ার মধ্য দিয়ে টানা চার কর্মদিবস বাড়ল সূচক। তবে নতুন বছরের শুরুতে দুই সপ্তাহ টানা উত্থানে থাকার পর উত্থান পতনের বৃত্তে চলে যাওয়া পুঁজিবাজারে নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় লেনদেনে চাঙাভাবে ফিরছে না।
আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের তুলনায় লেনদেন কিছুটা বাড়লেও এখনও তা দেড় হাজার কোটি টাকার বেশ নিচে রয়ে গেছে। চলতি বছরের শুরুতে তা দুই হাজার কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই হয়ে গিয়েছিল।
আগের দুটি রোববার পতনের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ জানুয়ারি সূচকের পতন হয় ৩৬ পয়েন্ট। তার আগের রোববার ২৩ জানুয়ারি সূচক পড়েছিল ৩২ পয়েন্ট।
এদিন সাধারণ বিমা খাতের ৪০টি কোম্পানির মধ্যে ৩৭টির শেয়ারদরই বেড়েছে। কমেছে বাকি তিনটির। বিমা খাতের মধ্যে জীবন বিমার ক্ষেত্রে এই চাঙাভাব দেখা যায়নি। এ্ই খাতের ১৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪টির, কমেছে আটটির আর একটি দর ছিল অপরিবর্তিত।
পরপর দুই রোববার পতনের পর সপ্তাহ শুরু হলো সূচকের উত্থান দিয়ে
তবে চাঙাভাব লক্ষ্য করা গেলেও সূচকে বিমা খাতের কোম্পানির প্রভাব থাকে কম। এর কারণ, এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন খুব একটা বেশি নয়। ৯.৯৫ শতাংশ বা শেয়ার প্রতি ৮ টাকা ৫০ পয়সা দর বাড়লেও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স সূচকে যোগ করতে পেরেছে কেবল ০.৭৫ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সূচকে সবচেয়ে বেশি ১২.২২ পয়েন্ট যোগ করেছে ওয়ালটন ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪.৫৪ শতাংশ।
সূচক বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাব রাখে বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো।
কোম্পানিটির কাছ থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বকেয়া কর দাবি করাকে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির শেয়ারদরে যে পতন হয়েছিল, সেখান থেকে গত কয়েক দিন ধরেই ধীরে ধীরে উত্থান হচ্ছিল। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি জানায় যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আবেদনটি আপিল বিভাগ চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দিয়েছে। ফলে এটা টাকা দাবির ইস্যুটির চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে গেছে।
এই খবরে দিনের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে যায় অনেকখানি। আগের দিন দর ছিল ৬৫০ টাকা ৪০ পয়সা। লেনদেন শুরুই হয় ৬৯৯ টাকা ৩০ পয়সায়। পরে খানিকটা পড়ে। শেষ পর্যন্ত দাম দাঁড়ায় ৬৭২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৩.৩২ শতাংশ। এই পরিমাণ দর বৃদ্ধিতেই সূচকে যোগ হয় ৯.৭৬ শতাংশ।
অর্থাৎ সূচক যতটা বেড়েছে, তার মধ্যে অর্ধেকই বাড়িয়েছে এই দুটি কোম্পানি।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে চারটিই ছিল বিমা খাতের। একক কোনো খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি ছিল সাধারণ বিমাই। নতুন কোম্পানি বিডি থাই ফুড ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সও ছিল এই তালিকায়। লেনদেন শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই প্রায় ১০ শতাংশ করে দর বৃদ্ধির প্রবণতা এখনও থামেনি কোম্পানি দুটির।
লেনদেনে সেরা ছিল বিবিধ খাত। এর প্রধান কারণ আলোচিত কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড আর মুনাফায় ব্যাপক উল্লম্ফন হওয়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
এই খাতে মোট লেনদেন ছিল ২১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে এই দুটি কোম্পানিতেই লেনদেন হয়েছে ২০০ কোটি ১ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বিমা খাতে। এর মধ্যে সাধারণ বিমা খাতেরই অবদান সবচেয়ে বেশি।
এর পরের অবস্থানগুলো ছিল প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, বস্ত্র এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। এগুলোতে লেনদেন হয়েছে একশ কোটি টাকার বেশি।
আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার প্রধানত ব্যাংক খাতের শেয়ারে দর বৃদ্ধিতে ভর করে সূচক বাড়লেও নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন এই খাতে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। তবে দরপতনের শতকরা হার খুব একটা বেশি ছিল না।
লেনদেনেও এই খাতে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতে আগ্রহ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে এই খাতে দর হারানো কোম্পানির তুলনায় দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল বেশি।
সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৩৫ কোটি ৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ২৬১ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
ওয়ালটন-বিএটিবিসি ছাড়া সূচকে অবদান যেসব কোম্পানির
ওয়ালটন ও বিএটিবিসি ছাড়া সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে স্কয়ার ফার্মা। শেয়ারদর ২.২ শতাংশ বাড়ায় কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ৩.৭১ পয়েন্ট।
সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল এই ১০টি কোম্পানি
এছাড়া বরির শেয়ারদর ২.০৬ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ৩.৫১ পয়েন্ট। গ্রামীণ ফোনের দর ০.৭৬ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ৩.০৫ পয়েন্ট।
এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ১.৭১ পয়েন্ট, এমকি ল্যাবরেটরিজ ১.৬৭ পয়েন্ট, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট ১.৫৬ পয়েন্ট, রেনাটা ১ পয়েন্ট এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ০.৭৫ পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ১০টি কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ৩৮.৯৪ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সূচক থেকে সবচেয়ে বেশি ১.৫৪ পয়েন্ট ফেলেছে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ১.৩৯ শতাংশ।
এ ছাড়া এনআরবিসি, আর এ সে সিরামিকস, বিকন ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক, বেক্সিমকো সুকুক, এসআইবিএল, সাউথবাংলা ব্যাংক এনবিএল ও সোনালী পেপার সূচক নিচের দিকে টেনে নামানোর চেষ্টা করেছে।
এই ১০টি কোম্পানি সম্মিলিতভবে সূচক ফেলেছে ৫.২২ পয়েন্ট।
ওয়ালটন-বিএটিবিসি ছাড়া সূচকে অবদান যেসব কোম্পানির
ওয়ালটন ও বিএটিবিসি ছাড়া সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে স্কয়ার ফার্মা। শেয়ারদর ২.২ শতাংশ বাড়ায় কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ৩.৭১ পয়েন্ট।
এছাড়া বরির শেয়ারদর ২.০৬ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ৩.৫১ পয়েন্ট। গ্রামীণ ফোনের দর ০.৭৬ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ৩.০৫ পয়েন্ট।
এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ১.৭১ পয়েন্ট, এমকি ল্যাবরেটরিজ ১.৬৭ পয়েন্ট, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট ১.৫৬ পয়েন্ট, রেনাটা ১ পয়েন্ট এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ০.৭৫ পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ১০টি কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ৩৮.৯৪ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সূচক থেকে সবচেয়ে বেশি ১.৫৪ পয়েন্ট ফেলেছে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে। কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ১.৩৯ শতাংশ।
সূচক সবচেয়ে বেশি কমিয়েছে এই ১০ কোম্পানি
এ ছাড়া এনআরবিসি, আর এ সে সিরামিকস, বিকন ফার্মা, ইসলামী ব্যাংক, বেক্সিমকো সুকুক, এসআইবিএল, সাউথবাংলা ব্যাংক এনবিএল ও সোনালী পেপার সূচক নিচের দিকে টেনে নামানোর চেষ্টা করেছে।
এই ১০টি কোম্পানি সম্মিলিতভবে সূচক ফেলেছে ৫.২২ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
এই তালিকার প্রথমেই ছিল রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। ৯.৯৫ শতাংশ দর বেড়েছে কোম্পানিটির। গত বছর ব্যাপক উত্থানে শেয়ারদর দেড় শ টাকার কাছাকাছি চলে গেলেও পরে তা নেমে আসে ৮০ টাকার ঘরে। সেখান থেকে এক দিনে সাড়ে আট টাকার মতো উদ্ধার হয়েছে। সবশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৯৩ টাকা ৯০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৯৪ শতাংশ দর বেড়েছে গত ২৩ ডিসেম্বরের পর থেকে শেয়ারপর তিন গুণ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের। আগের দিন কোম্পানিটির দর ছিল ১৩৪ টাকা ৮০ পয়সা। এক পর্যায়ে দর কমে হয় ১৩১ টাকা। তবে দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ১৪৮ টাকা ২০ পয়সা।
একমি ল্যাবরেটরিজ, বিডি থাই ফুড, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদরও বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততটাই।
এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, কাট্টালি টেক্সটাইল, গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও মিথুন নিটিং ছিল এই তালিকায়।
শীর্ষ ১০টি কোম্পানির বাইরে ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে ২টি কোম্পানির দর, ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে ৩টি কোম্পানির দর, ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে ৬ কোম্পানির দর, ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে ১৭ কোম্পানির দর, ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে ২৭টি কোম্পানির দর।
দর পতনের শীর্ষ ১০
এই তালিকার শীর্ষে ছিল বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম। কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কম আয়ের তথ্য জানানোর পর শেয়ারদর কমেছে ৬.৪৫ শতাংশ। তবে লেনদেন হয়েছে বেশ ভালো। ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৫২২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ ৯২ হাজার টাকায়।
খাতওয়ারি লেনদেনের শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.৪৭ শতাংশ দরপতন হয়েছে ন্যাশনাল পলিমারের। কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয় বাড়ার তথ্য জানানোর পর শেয়ারদরে গত কয়েকদিনে উত্থান হয়েছিল।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫.৪৭ শতাংশ দর হারিয়েছে স্বল্প মূলধনি লিবরা ইনফিউশন। চতুর্থ সর্বোচ্চ ৫.৪৪ শতাংশ দর হারিয়েছে কুইনসাউথ টেক্সটাইল। পঞ্চম সর্বোচ্চ ৪.৭৪ শতাংশ দর হারিয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক বা এনআরবিসি।
এছাড়া সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ৪.৩১ শতাংশ, আইসিবি অগ্রণী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ৪.২১ শতাংশ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ৪.০৫ শতাংশ, বিডি ল্যাম্পস ৩.৮০ শতাংশ এবং অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড ৩.৭১ শতাংশ দর হারিয়েছে।
আরও ৭টি কোম্পানি ৩ শতাংশ, ১৮টি কোম্পানি ২ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।
লেনদেনের শীর্ষ ১০
দরপতন হলেও সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের। একমাত্র কোম্পানি হিসেবে ১০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির।
১০৪ কোটি ৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে ৬৯ লাখ ৪১ হাজার ৪৩৮টি শেয়ার।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৬৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৮৩টি।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বিএটিবিসির ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ২৭ হাজার টাকায়।
একমি ল্যাবরেটরিজ, বাংলাদেশে বিল্ডিং সিস্টেমস, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফরচুর সুজ, স্কয়ার ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা ও কাট্টালি টেক্সটাইল ছিল সবচেয়ে বেশি লেনদেনের তালিকায়।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ৪৭২ কোটি ৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।