বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসে পেট্রলবোমা হামলা মামলার বিচার কত দূর?

  •    
  • ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:১৭

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মেদ প্রিন্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর পর এই মামলার প্রধান আসামির মৃত্যু হয়েছে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। এ ছাড়া চারজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তাদের ডেথ রেফারেন্সের নথি আদালতে জমা পড়তে দেরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বিচারকাজে।’

গাইবান্ধায় বাসে পেট্রলবোমা হামলা মামলার বিচার সাত বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপ্রার্থীরা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, পাঁচ আসামির মৃত্যুর কারণে এই বিলম্ব। তবে দ্রুত শাস্তি পাবেন অপরাধীরা।

২০১৪ সালে সারা দেশে হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। সেই কর্মসূচির মধ্যে ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় বাসে পেট্রলবোমা হামলায় প্রাণ হারান নারী ও শিশুসহ ৮ জন।

এ ঘটনায় পরদিন মামলা হয়। তদন্ত শেষে বিএনপি-জামায়াতের ৭৭ জনের বিরুদ্ধে চর্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত ১০১ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে মাত্র দুজনের।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মেদ প্রিন্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর পর এই মামলার প্রধান আসামির মৃত্যু হয়েছে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। এ ছাড়া চারজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তাদের ডেথ রেফারেন্সের নথি আদালতে জমা পড়তে দেরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বিচারকাজে।’

আগামী ১৪ মার্চ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে জানিয়েছে এই আইনজীবী বলেন, ‘নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার অবশ্যই হবে। দ্রুতই শাস্তি পাবেন অপরাধীরা।’

ঘটনার দিন নাপু এন্টারপ্রাইজের বাসে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে উঠেছিলেন সুন্দরগঞ্জের চণ্ডিপুর গ্রামের রিকশাচালক তারা মিয়া। আগুন থেকে নিজে বাঁচলেও স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি তিনি।

তারা মিয়া বলেন, ‘কী দোষ আছিল (ছিল) হামার (আমার)। বিনা দোষে আগুনে দাউদাউ করে বউ-বেটা পুড়ে মরল। বুকের ধন হারানো (হারালাম), কিন্তু বিচার পাইনো (পেলাম) না।’

সেদিন একই বাসে উঠেছিলেন সুমন মিয়া। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বোমা হামলায় সুমন ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে সুমনের বাবা শাহজাহান আলী বলেন, ‘সুমন ছুটিতে বাড়ি এসেছিল। কিন্তু সেদিন কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তুলসীঘাটে হামলায় নিহত হয়। আফসোস একটাই, অভিযুক্তরা জামিনে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা কি বিচার পাব না এত বড় হত্যার ঘটনার।’

মেয়ের ছবি হাতে কৃষক বলরাম দাস। ছবি: নিউজবাংলা

চণ্ডিপুর গ্রামের কৃষক বলরাম দাস। ৬ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী সাধনা রানী ও সাত বছরের মেয়ে শিল্পীকে নিয়ে সেই বাসে মানিকগঞ্জে যাচ্ছিলেন। বোমা হামলায় পরিবারটির তিনজনেই দগ্ধ হন। বলরাম ও তার স্ত্রী প্রাণে বাঁচলেও শিশুকন্যা শিল্পীকে হারাতে হয়।

বলরাম বলেন, ‘গাইবান্ধাত ওটি (গাইবান্ধার এখানে) হুট (হঠাৎ) করি শব্দ করিল (করল)। পরে বাসত (বাসে) আগুন ধরিল (ধরে)। বউ নিয়ে নামছি। কিন্তু বেটিটা (মেয়েটা) পুড়ে মরিল (মরল)।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার এনা (একটু) খোঁজও নেয় না। বিচের (বিচার) পামো (পাব) কি না তাও কবার (বলতে) পাতিচি (পারছি) না।’

বলরাম দাসের স্ত্রী বলেন, ‘মানসে (মানুষ) আমাক (আমাকে) বাই করছি (বের করেছে) টানিছেঁচড়ি (টেনেহিঁচড়ে)। তারপর হসপেটাল (হাসপাতাল) নিয়া গেছি। জ্ঞান ফিরি পায়া শুনি বুকের ধন (মেয়ে) আর নাই।’

শুধু আটজনের মৃত্যু নয় ওই হামলায় আহত হন অন্তত ৪০ জন। তাদের কেউ পঙ্গু হয়েছেন। অন্যরা বেঁচে আছেন শরীরে ক্ষত নিয়ে। ঘটনার পর সরকারিভাবে কিছু সহযোগিতা করা হলেও পরে আর তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিহত করার নামে দেশজুড়ে লাগাতার হরতাল-অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। সেই হরতাল-অবরোধ চলাকালে ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার তুলসীঘাটের বুড়িরঘর এলাকায় সুন্দরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নাপু এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত।

এতে পুরো বাসে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে মারা যায় শিশুসহ ৬ জন। এ ছাড়া আহত হয় শিশুসহ অন্তত ৪০ জন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় আরও দুজন।

সেদিনের হামলার শিকার যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন দিনমজুর আর রিকশাচালক। তারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে যাচ্ছিলেন।

হামলার পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ও জামায়াত-শিবিবের ৬০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ৩০ জন অজ্ঞাতপরিচয় আসামির নামে সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করেন তৎকালীন সদর থানার এসআই মাহাবুবুর রহমান। পরে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তদন্ত শেষে আদালতে ৭৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ গঠন হয়। তবে চার্জ গঠনের কয়েক দিন পর এই মামলার প্রধান আসামি গাইবান্ধা সদর উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি মোস্তফা মনজিল র‌্যাবের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হন। পরে মামলার চার আসামির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

আইনজীবী ফারুক আহাম্মেদ প্রিন্স বলেন, ‘চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে একজন আসামি পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া সব আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।’

গাইবান্ধাবাসী এই দিনটিকে ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ও আতঙ্কের দিন হিসেবে স্মরণ করেন।

হামলায় নিহতরা হলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ি ইউনিয়নের আবুল কালাম আজাদ, খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই গ্রামের জিলহজ আলী, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কালীর খামার গ্রামের সৈয়দ আলী, পশ্চিম সীচা গ্রামের হালিমা বেগম, চণ্ডিপুর গ্রামের সুমন মিয়া, একই গ্রামের শিল্পী রানী দাস, চণ্ডিপুর গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া ও তার স্ত্রী সোনাভান বিবি।

এ বিভাগের আরো খবর