বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৃষ্টিতে নষ্ট কোটি টাকার কাঁচা ইট

  •    
  • ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৪:৪২

ইটভাটার মালিক আজাদ হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ বৃষ্টিতে খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টিতে প্রায় ১ কোটি কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

মাঘের শেষের দিকে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে নওগাঁ জেলায় নষ্ট হয়েছে বেশ কিছু ইটভাটার কাঁচা ইট।

শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এতে করে জেলার প্রায় ১৫৭টি ইটভাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভাটার খলিয়ানে থাকা অধিকাংশ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।

জেলার ইটভাটা মালিকদের দাবি তাদের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বৃষ্টিতে।

নওগাঁ জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বছরে একটি ভাটায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। পোড়ানোর অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১৫ কোটি কাঁচা ইট বৃষ্টির পানিতে গলে গেছে। অনেক আধা শুকনা ইট বৃষ্টির পানিতে দাগ পড়েছে। ইটভাটাগুলোতে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় খলিয়ানে থাকায় ইট রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আবার কোনো কোনো ইট ভাটায় খামাল করে রাখা ইটে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখায় কিছুটা রক্ষা পেয়েছে।

তবে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হওয়ায় এখন বাড়তি সময়, শ্রমিক ও টাকা গুনতে হবে মালিকদের। নষ্ট ইট আঙিনা থেকে সরিয়ে পুনরায় পানি দিয়ে নরম করে ইট তৈরি করতে হবে।

এ ছাড়া বৃষ্টিতে আঙিনা নষ্ট হলে কয়েকদিন শ্রমিকদের বসে বসেও পারিশ্রমিক দিতে হবে মালিকদের।

শনিবার সদর উপজেলার বরুনকান্দি, শিবপুর, বোয়ালিয়া পাহাড়পুর, কীর্তিপুর ও শশীর মোড় এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, খলিয়ানে শুকানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখা কাঁচা ইট বৃষ্টির পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ইটগুলো গলে গেছে। কিছু কাঁচা ইট খামাল করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া চুল্লিতে পোড়ানোর জন্য সাজানো ইটও গলে গেছে।

সদর উপজেলার বরুনকান্দি এলাকায় মেসার্স এবিসি ইটভাটার মালিক আজাদ হোসেন বলেন, ‘আমার পাঁচটি ইটভাটা আছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টিতে খলিয়ানে থাকা প্রায় ১ কোটি কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব মাটি খলিয়ান থেকে সরিয়ে আবারও শোধন করে ইট তৈরি করতে বাড়তি টাকা খরচ হবে।’

সদর উপজেলার পাহাড়পুর এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ডলি ব্রিকস ফিল্ড (ডিবিএফ) ইটভাটা।

ভাটার ম্যানেজার তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘ভাটায় চুল্লিতে প্রতি রাউন্ডে প্রায় ৬ লাখ ইট পোড়ানো যায়। আর প্রতি বছর ইট পোড়ানো হয় প্রায় ৫০ লাখ পিস। গত বছর বৃষ্টিতে অল্প সংখ্যক কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। তবে এ বছর হঠাৎ বৃষ্টিতে চারটি খলিয়ানে থাকা প্রায় ১৬ লাখ পিস কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।

‘শ্রমিক, মাটি ও বালুসহ প্রতি ইট তৈরিতে আনুষঙ্গিক খরচ পড়েছে প্রায় ৫ থেকে ৬ টাকা। সে হিসাবে প্রায় ৮০ লাখ টাকার কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। পোড়ানোর জন্য চুল্লিতে সাজিয়ে রাখা কিছু ইটও গলে গেছে। পলিথিন দিয়ে খামাল করে রাখায় রক্ষা পেয়েছে প্রায় ২ লাখ কাঁচা ইট।’

তিনি জানান, গত দুই দিন থেকে শ্রমিকদের বসে বসে মজুরি ও খেতে দিতে হচ্ছে। খলিয়ান শুকাতে আরও ৮ দিন লাগবে। প্রতিদিন ১২ হাজার টাকা মজুরিসহ খরচ হচ্ছে। সে হিসেবে ১০ দিনে মজুরিসহ খরচ হবে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। হঠাৎ বৃষ্টিতে এ মৌসুমে প্রায় ১ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।

বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া শনিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে বৃষ্টির কারণে শীতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’

নওগাঁর মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে লালমনিরহাটের ইটভাটার মালিকও।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয় লালমনিরহাটে। এ কারণে জেলার ৩৬টি ভাটার কাঁচা ও শুকনো ইট পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।

ইটভাটার মালিকেরা বলছেন, এভাবে যদি আরও টানা কয়েকদিন বৃষ্টি চলতে থাকে তাহলে ভাটা চালু রাখা যাবে না।

আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের টেপাটারী ভাটাপাড়া এলাকার এলএমবি ও মেসার্স সান ব্রিকস ভাটায় দেখা যায়, রোদে শুকাতে দেয়া কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এ ছাড়া পোড়ানোর আগে শুকানো সারিবদ্ধ করে রাখা ইটগুলোও বৃষ্টির পানিতে গলে নষ্ট হয়ে গেছে।

এলএমবি ব্রিকসের ম্যানেজার শেফাউল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘গত দুই দিনের এই বৃষ্টিতে আমাদের ১০ লাখ শুকানো ইটের ক্ষতি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হবে।’

মেসার্স সান ব্রিকসের মালিক এমদাদুল হক বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে আমার ভাটার ১৫-২০ লাখ টাকা ক্ষতি হবে। আবহাওয়া যদি এমন চলতে থাকে তাহলে এ বছর আর ভাটা চালু করা সম্ভব হবে না। ’

লালমনিরহাট জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে জেলার ৩৬টি ভাটার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়লার দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ, আর শ্রমিক ও মাটির দামও বেশি। এত কিছুর মধ্যেও ভাটাগুলো আমরা সচল রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় আমাদের ভাটা মালিকদের অনেক লোকসান হয়েছে। এই ক্ষতি অনেক ভাটা মালিক পুষিয়ে উঠতে পারবে না। এ কারণেই হয়ত তাদের ভাটাগুলো এবারের মতো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর