দেশের শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। এ জেলার উৎপাদিত ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন শস্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ করা হয়। তার পরও প্রায় মৌসুমেই লোকসানের বোঝা টানতে হয় জেলার কৃষকদের।
তবে এবার কাটারিভোগ ধানের পরিস্থিতি কিছুটা ব্যতিক্রম। চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে ঐত্যিবাহী কাটারিভোগ (ফিলিপাইন কাটারি) ধান আবাদ করে স্মরণকালের সর্বোচ্চ দাম পাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বছর এই সুগন্ধি কাটারিভোগ ধানের দাম কম হওয়ায় এবার অল্প পরিমাণে আবাদ হয়েছে। ফলে বাজারে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার স্মরণকালের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে এই ধান।
জেলার বিভিন্ন ধানের হাট ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বছর বিভিন্ন হাটে ৭৫ কেজির কাটারিভোগ বস্তার দাম উঠেছে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ কেজিপ্রতি পড়েছে প্রায় ৬৬ টাকা। গত বছর এই বস্তা বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়।
এবার দাম বেশি পেয়ে খুশি কৃষকরা আগামীতে বেশি করে কাটারিভোগ ধান আবাদের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন।
দিনাজপুর সদর উপজেলার কমলপুর গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, ‘গত বছর কাটারিভোগ আবাদ করেছিলাম। কিন্তু সেই সময় দাম কম থাকায় লাভ হয়নি। তাই এবার অল্প জমিতে আবাদ করেছি। কিন্তু এ বছর বাজারে ধানের যে দাম, আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।’
করিমুল্লাপুর গ্রামের কৃষক শরিফ আহমেদ বলেন, ‘চলতি বছর কাটারিভোগ ধানের এমন দাম পাব আশাই করিনি। এ বছর আমি অল্প জমিতে ধান আবাদ করেছি। আগামীতে আরও বেশি করে আবাদ করব।’
ধান ক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ ধানের বেশ কদর রয়েছে। রয়েছে চাহিদাও। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে কাটারিভোগ ধানের সরবরাহ খুব কম। তাই বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে।’
কাহারোল উপজেলার ধানের পাইকার হাসিনুর রহমান বলেন, ‘গত বছর কাটারিভোগের দাম কম ছিল। কিন্তু এ বছর বাজারে কিনতে এসে ধানের দেখাই পাচ্ছি না। যা পাচ্ছি, তার দামও আকাশছোঁয়া।’
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার অটোরাইস মিল মালিক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘কাটারিভোগ ধানের বেশ চাহিদা রয়েছে। এ বছর বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। তবে ব্যবসা করতে গেলে তো বাজারে বেশি দামের ধানও কিনতে হবে। গত বছর আমি ৩ হাজার ৩৫০ টাকা বস্তা কিনেছি। কিন্তু এবার প্রায় ৫ হাজার টাকা বস্তা কিনতে হচ্ছে। তবে আমি চাই, কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাক।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর দিনাজপুরে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সুগন্ধি জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে। তবে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী কাটারিভোগ ধান আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৭৬ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. মাহবুবুর রশীদ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর দিনাজপুরে কাটারিভোগ ধানের আবাদ খুব কম হয়েছে। তাই এবার কৃষক দাম বেশি পাচ্ছেন। আগামীতে এই ধানের আবাদ যাতে বেশি হয়, সে ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করবেন।’
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।