দেশে নির্মাণ খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনরা। এ লক্ষ্যে নির্মাণ খাতের অন্যতম উপকরণ এমএস রডের স্থানীয় দাম এবং কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও পরিবহন খরচসহ সার্বিক মূল্য পর্যালোচনা করতে তিন মাস পরপর নিয়মিত বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অবকাঠামো নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও কাঁচামাল উৎপাদকরা।
সম্প্রতি এফবিসিসিআই কার্যালয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এমএস রড ও কাঁচামাল স্ক্র্যাপের মূল্য পর্যালোচনা-সংক্রান্ত ভার্চুয়াল বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) নেতারা।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএর সভাপতি মানোয়ার হোসেন ও বিএসিআইয়ের সভাপতি শফিকুল হক তালুকদার।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, সংগঠনের বর্তমান কমিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মেদ আলমগীর ও মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
বৈঠকে দেশে নির্মাণ খাতের বর্তমান বাস্তবতার নানা বিষয় আলোচনা হয়। এরপর সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত হয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের গতি ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে নির্মাণ খাতের সমস্যা নিরসনের তাগিদ দেন।
এফবিসিসিআই সভাপতির পরামর্শে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, দুই খাতের উদ্যোক্তারা প্রতি তিন মাস পরপর সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে পারস্পরিক আলোচনায় বসবেন।
বৈঠকে বিএসএমএর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত দুই বছরে স্টিল তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও রাসায়নিকের দাম বৃদ্ধিসহ জাহাজ ও কনটেইনারের ভাড়া বেড়েছে। ফলে রডের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের নির্মাণ খাতেও।
আরও জানানো হয়, বিশ্ববাজারে বর্তমানে কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। এতে দেশে এমএস রডের সামগ্রিক উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫২ শতাংশ। যদিও এর বিপরীতে বিক্রয় মূল্য বেড়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশ।
এ অবস্থায় বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির তুলনায় বিক্রয় মূল্য না বাড়ায় অনেক ক্ষেত্রেই লোকসান দিয়ে রড বিক্রি করতে হচ্ছে। দেশে এখন প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৭৮ হাজার টাকায়। অথচ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তা বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি টাকায় ৮৬ হাজারে।
দেশে এমএস রডের দাম সহনীয় রাখতে স্ক্র্যাপ ও স্পঞ্জ আয়রন আমদানিতে বিদ্যমান সব শুল্ক-কর হ্রাস করার দাবিও জানান বিএসএমএ নেতারা। পাশাপাশি, দেশীয় শিল্প ক্ষতি রক্ষায় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে রড আমদানি করার অনুমতি না দেয়ারও আহ্বান জানান।
অন্যদিকে বিএসিআই থেকে দাবি করা হয়, ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের অবকাঠামো নির্মাণ কোম্পানিগুলো।
বিএসিআই নেতারা জানান, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত বিধিমালা-পিপিআর ও সিপিটিইউ থেকে জারি করা পরিপত্রে সরকারি প্রকল্পগুলোয় মূল্য সমন্বয়ের কথা রয়েছে। কিন্তু সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত বেশির ভাগ প্রকল্পের চুক্তিতে মূল্য সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হয়নি। যে কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারি প্রকল্পের চুক্তিমূল্য বাড়ানোর আহ্বান জানায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ।