বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘যাদের অঢেল টাকা, তারাই লাউ কিনুক’

  •    
  • ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:২৭

কৃষক সাদ্দাম মিয়া বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে অন্যান্য সবজিসহ লাউ চাষ করেছি। এবার প্রচুর লাউ হয়েছে। এক মাস আগে ২৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেছি। এখন লাউয়ের পরিমাণ কিছুটা কমে যাওয়ায় ৩৫ টাকা দামে ছেড়ে দিচ্ছি। কয়েক হাত ঘুরে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।’

‘আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। ঢাকার বাজারগুলোয় এক পিস লাউয়ের দাম ১০০ টাকা। বাসায় ছুটিতে এসে বাজারে সবজি কিনতে এসেছি। এখানে দেখি লাউয়ের দাম ৭০ টাকা। এত দামে লাউ কেনার মানে হয় না৷ যাদের অঢেল টাকা আছে তারা লাউ কিনুক।’

শনিবার সকালে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে লাউ কিনতে এসে এভাবেই আক্ষেপ জানালেন সাকিন নামে এক যুবক।

ইতোমধ্যে মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে লাউয়ের দাম। বাজারে পর্যাপ্ত লাউ থাকলেও সহনীয় দামে বিক্রি করছেন না খুচরা বিক্রেতারা৷ তবে কৃষকরা বলছেন, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ লাউ কম দামেই সরবরাহ হচ্ছে। এদিকে বিক্রেতাদের দাবি, চাহিদা বাড়ার কারণেই লাউয়ের দাম বেড়েছে।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন বিক্রেতা লাউ নিয়ে বসে আছেন। অন্য বিক্রেতারা সকালেই লাউ বিক্রি শেষ করেছেন। কয়েকটি লাউ খাঁচায় পড়ে থাকলেও এক পিস লাউ ৭০ টাকার নিচে কাউকে দেয়া হচ্ছে না। এতে দামাদামি শেষে লাউ না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন ক্রেতারা।

লাউয়ের দাম বাড়া প্রসঙ্গে সবজি বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ৫০টি লাউ কৃষকের ক্ষেত থেকে নিয়ে আসি। মধ্য জানুয়ারি থেকেই কৃষকরা কিছুটা বেশি দামে আমাদের কাছে বিক্রি করছেন। এ জন্য আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি।’

কৃষকদের কারণেই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে বাজারে লাউয়ের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম। এ জন্য লাউয়ের দাম খুব বেশি। শিগগিরই দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা জয়নাল মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে লাউ টাকাওয়ালা লোকজনই কিনতে পারছেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতেগোনা কয়েকজন লাউ কিনলেও অনেকে দরদাম করেন। পরে তারা লাউয়ের বদলে অন্য সবজি কেনেন। এতে আমাদের কোনো দোষ নেই। আমরা ৮-১০ টাকা লাভ করে লাউ বিক্রি করছি। কারণ পরিবহন খরচের কথাও মাথায় রাখতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনতে পারায় এই দামে বিক্রি করতে পারছি। পাইকারদের মাধ্যমে যেসব খুচরা বিক্রেতা লাউ কিনছেন, তারা আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন।’

লাউ কেনার সময় বিক্রেতার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন। পরে লাউ না নিয়ে পাশের দোকান থেকে অন্য সবজি কেনেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন বিক্রেতাদের কাছে এক রকম জিম্মি হয়ে গেছি। তারা যে দাম বলবে সেটি দিয়েই কিনতে বাধ্য হচ্ছি। মাত্র একটি লাউয়ের দাম কমপক্ষে ৭০ টাকা দিতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার মনিটর করলেই দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।’

কৃষকদের কারণেই লাউয়ের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে কি না জানতে কথা হয় সদর উপজেলার পরাগঞ্জ গ্রামের আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই গ্রামে লাউসহ প্রচুর সবজি হয়। লাউয়ের দাম বাড়ার পেছনে আমাদের হাত নেই। দামের কারসাজির মূল হোতা পাইকাররা। আমরা লাউগুলো সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করি। সেগুলো তারা কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কমপক্ষে ৫০ টাকায় বিক্রি করেছে। এরপর ক্রেতারা ৭০-৭৫ টাকা দিয়ে লাউ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।’

একই গ্রামের কৃষক সাদ্দাম মিয়া বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে অন্যান্য সবজিসহ লাউ চাষ করেছি। এবার প্রচুর লাউ হয়েছে। এক মাস আগে ২৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেছি। এখন লাউয়ের পরিমাণ কিছুটা কমে যাওয়ায় ৩৫ টাকা দামে ছেড়ে দিচ্ছি। কয়েক হাত ঘুরে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।’

ময়মনসিংহ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘পাইকারি সিন্ডিকেটের কারণে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে পারবে না। এমন প্রমাণ মিললে প্রশাসনকে জানানো হবে। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর