রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের ঘটনায় প্রায় ১৩ বছর ধরে কারাবন্দি রয়েছে শত শত বিডিআর সদস্য। তাদের মামলার চূড়ান্ত শুনানি এখনও শেষ হয়নি। কারাবন্দি সেসব ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।
ঢাকার জেলা জজ আদালত সংলগ্ন কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে রোববার দুপুর দেড়টায় এ সংবাদ সম্মেলন হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারাবন্দি বিডিআর সদস্য আব্দুর রশিদের ছেলে সাকিব আহম্মেদ বন্দিদের পরিবারের পক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন।
পিলখানা ট্রাজেডির ঘটনায় হওয়া দুই মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ জানান, পিলখানা মামলার আসামিদের অবস্থা মানবেতর৷ ১৩ বছর কারাভোগ করা হয়ে গেছে তাদের। অথচ হত্যা মামলায় ২৭৮ জন খালাস পেয়েছেন।
তিনি জানান, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অন্য একটি মামলা ঝুলে থাকায় মূল মামলায় খালাস পেয়েও আসামিরা মুক্তি পাচ্ছেন না৷ হত্যা মামলারও চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয়নি। সব মিলিয়ে পরিবারগুলো উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আশায় বুক বেঁধে এইসব কারাবন্দির পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। বছরের পর বছর গড়িয়ে গেলেও তারা কোনো বিচারিক ও সঠিক সমাধানের বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পেরে প্রতিটি মুহূর্তে আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এই ঘটনায় সবাই যে দোষী, তা তো নয়। তাই বিষয়টির একটি চূড়ান্ত ফায়সালা দরকার।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। বিডিআর বিদ্রোহের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
দুই কমিটির প্রতিবেদনে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনেই এর বিচার করে।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা, আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। খুনের মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এ মামলায় আপিলের রায়ও হয়ে যায়।
অপরদিকে বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামি রয়েছে। হত্যা মামলার সঙ্গে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে, কিন্তু মাঝপথে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেনি।
একপর্যায়ে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম একপ্রকার স্থগিত করে দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে দেরি হয়।