লাউয়ের দাম শুনে হা করে বিক্রেতার দিকে তাকিয়ে কলেজছাত্র তৌফিক আল সানি। বিক্রেতা তার থেকে একটি লাউয়ের দাম চেয়েছেন ৫০ টাকা। তৌফিক এর আগে কখনও এত দামে লাউ কেনেননি। ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দনগর সমবায় বাজারে নতুন অভিজ্ঞতা তার।
এ সময় তৌফিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রাবাসে থাকি। খুব একটা বাড়ির মতো করে ভালো তরকারি খেতে পারি না। দুবেলা সবজি দিয়েই খাবার সারতে হয়। এখন সেটাও হচ্ছে না। সবজির আগুন দাম, হাতই দেয়া যাচ্ছে না।’
ঠাকুরগাঁওয়ে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে লাউয়ের দাম বেড়েছে ৫ গুণ। প্রতি পিস ১০ টাকার লাউ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
ক্রেতা নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমি ডায়াবেটিসের রোগী। ডাক্তারের পরামর্শে সবুজ শাকসবজি বেশি বেশি খেতে হয়। লাউয়ের এমন চড়া দাম শুনে কেনার আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ। একটা লাউ ৫০ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়ার সামর্থ্য আমার নাই।’
লাউয়ের এত দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতা রুবেল রানা বলেন, ‘তিনি কিছুদিন আগেও লাউ প্রতি পিস ৫ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এখন সেই লাউ হাত বদল হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। কারণ কৃষকের কাছ থেকে এক পিস লাউ কিনতে তার গুনতে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।’
নারগুণ ইউনিয়নের কৃষক ভবতোষ রায় বলেন, ‘লাউ রবি মৌসুমের সবজি হলেও ঠাকুরগাঁওয়ে ১২ মাস চাষ হয়। কিন্তু এই মৌসুমে কুয়াশা ও শীতজনিত কারণে অনেক চাষির গাছ মরে গেছে। ফলে লাউয়ের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বাজারে তেমন লাউ সরবরাহ করতে পারছেন না কৃষকরা। তাই চড়া দামে লাউ বিক্রি করা হচ্ছে।’
সদর উপজেলার ভাউলার এলাকার কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, ‘এবারে তিনি লাউ চাষে লাভবান হয়েছেন। অন্যবার লাউ ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করলেও এবারে মাচাতেই লাউ পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ২৬০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। শীতজনিত কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে লাউয়ের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে দাম কিছুটা বৃদ্ধি হতে পারে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জোহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যেন ক্রেতাদের ভোগান্তি না হয়, সে জন্য আমরা বাজার মনিটর করছি। কোনো রকম অস্বচ্ছতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’