শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যেই অব্যাহত রয়েছে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম। প্রথম ডোজের পর দেশে শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়ার কর্মসূচি। দ্বিতীয় ডোজের প্রথম দিনে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে চরম অবহেলা দেখা গেছে রাজধানীর টিকাকেন্দ্রগুলোতে।
করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে শনিবার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে রাজধানীর কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় করেছে শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে শনিবার চার হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার সময় দেয়া হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই কেন্দ্রে আসতে শুরু করে।
টিকা দেয়া শুরু হয় সকাল ৯টায়। তার আগেই শিক্ষার্থীরা অন্তত সকাল ৭টায় এসে লাইনে দাঁড়ায়।
শিক্ষার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে টিকাদানের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের। ভিড় ও যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন করা হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য।
টিকাকেন্দ্রে একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একজন করে অভিভাবকও এসেছেন। এতে ভিড় বেড়েছে আরও বেশি।
টিকা নিতে রাজধানীর কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিড়। ছবি: নিউজবাংলা
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক আলাদা দিন ও সময় নির্ধারণ করে দিলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড় এড়ানো সম্ভব হতো।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, দু-এক দিনের মধ্যে ভিড় কমে যাবে।
টিকাদান কেন্দ্রের সামনে দেখা যায়, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন।
রাজধানীর চার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসেছে স্কলার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই তাদের মধ্যে। অনেকেই আবার হাজির হয়েছেন মাস্ক ছাড়াই।
অবশ্য টিকাদান শুরু হলে অল্প সময়ের মধ্যেই ভিড় কমতে শুরু করে। অপেক্ষা করেও টিকা নিতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী আজাদুর রহমান বলেন, ‘সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ১১টার দিকে টিকা দিতে পেরেছি। টিকা দেয়ার পর দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার ক্লান্তি ও বিরক্তিভাব কেটে গেছে। আশা করি, দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে ওমিক্রন রুখতে পারব।’
আরেক শিক্ষার্থী আতিকুল রহমান বলেন, ‘টিকাদান কেন্দ্রে অনেক ভিড়। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী যদি টিকাদানের সময় বলে দেয়া হতো, তাহলে ভিড় এড়ানো যেত।’
মেয়েকে টিকা দিতে আসা এক শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ আরও বেশি সচেতন হতে পারত। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ভিড় ও সমস্যা এড়ানো যেত। শিক্ষার্থীরা নিয়ম মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা গ্রহণ করলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীরা এসে খুব ঝামেলা করে। তাদের কারণে টিকাদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়। প্রভাবশালীদের নিয়ম ভাঙার ইচ্ছা ও অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে আরও বেশি দেরি হয় আমাদের।’
বাসাবো স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল বাশার বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জানাতে চাই, স্বাস্থ্যবিধি মানতে, ওমিক্রন রুখতে অবশ্যই এলাকাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিকাদানের ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে এ ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আর পড়তে হবে না শিক্ষার্থীদের।’
দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের পরীক্ষামূলক টিকাদান শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে। আর নভেম্বরে শুরু হয় স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকাদান।
অবশ্য প্রথম দিকে অনেক শিক্ষার্থী টিকার বাইরে ছিল। পরে টিকা ছাড়া স্কুলে সশরীরে ক্লাস করতে দেয়া হবে না ঘোষণার পর কর্মসূচিতে গতি পায়। এর মধ্যে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে টিকাদানে গতি বাড়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডিসেম্বর থেকে ৪৫ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে টিকাদানে গতি আরও বাড়িয়ে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম ডোজের পর এখন চলছে দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান।
দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হয় অক্টোবর থেকে।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়লে দেশে আবারও বেড়ে যায় করোনা সংক্রমণ। গত ২১ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্কুল-কলেজ বন্ধসহ পাঁচ দফা নির্দেশনা জারি করে।