সিলেটের কানাইঘাটের যুবক ফরিদ উদ্দিন খুনের ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যসহ তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। একই সঙ্গে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান র্যাব-৯-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন, কাওছার আহমদ ও মোস্তাক আহমদ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি বিকেলে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফরিদ উদ্দিনকে। এ ঘটনায় ফরিদের বাবা মো. রফিকুল হক কানাইঘাট থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ২ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলা করেন।সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, র্যাবের গোয়েন্দাসহ ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত মৌলভীবাজারের শেরপুর থেকে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নাজিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যার সঙ্গে জড়িত কাওছার আহমদকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা ও মোস্তাক আহমদকে নগরীর বন্দরবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা জানান, নিহত ফরিদ ও গ্রেপ্তারকৃতরা একই এলাকার বাসিন্দা ও আত্মীয়। এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে আগেও উভয় পক্ষের মধ্যে হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে।
নাজিম উদ্দিন সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাদের বিরোধ ফের চাঙা হয়ে ওঠে। নাজিম ও তার অনুসারীরা ফরিদকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয়। হত্যার দুদিন আগে এ নিয়ে ফরিদ তার ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে নাজিমের ভাই এনাম কমেন্ট করে ফরিদকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।র্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার দিন বিকেলে ফরিদ তার আত্মীয় শাহিনকে নিয়ে মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথে এফআইভিডিবি স্কুলের সামনে পৌঁছালে ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুজন মুখোশধারী ফরিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এ সময় দুর্বৃত্তরা ফরিদের একটি পা কেটে নিয়ে যায়। এ ছাড়া ফরিদের দুই পায়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই ফরিদ মারা যান।ফরিদের আত্মীয় শাহীনও হামলার শিকার হন। তবে তিনি ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন এবং স্বজনদের খবর দেন।নিজাম ও মোস্তাকের পরিকল্পনায় তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ফরিদকে হত্যা করা হয় জানিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন নিজাম মেম্বার এবং মোস্তাক নিজেদের ঘটনার বাইরে রাখার প্রমাণ দেখাতে তারা শহরের বাইরে চলে যান।’
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য দুটি টিমের কার্যক্রম সমন্বয় করছিলেন এ দুজন। দ্বিতীয় গ্রুপটি ফরিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল এবং তৃতীয় গ্রুপ পূর্ব থেকে নির্ধারিত জায়গা অর্থাৎ এফআইভিডিবি স্কুলের পাশে টিলার আড়ালে ওত পেতে সুযোগ মতো হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
হত্যার সঙ্গে জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।