দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জামালপুর সদর উপজেলার তুলসীপুরে নিয়মিত বসে ঘোড়ার হাট। নানা রঙের, উচ্চতার ও জাতের ঘোড়া বিক্রির জন্য আনা হয় এখানে।
সারা দেশের ক্রেতারা আসেন এই হাটে। দেখেশুনে কিনে নিয়ে যান পছন্দসই ঘোড়া। ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেকে শুধু শখের বশে ঘোড়া পালার জন্যও এই হাটে আসেন। অনেকে আবার ঘোড়া কেনেন ঘোড়দৌড়ের জন্য।
প্রতি বৃহস্পতিবার বসা এই হাটে আনা হয় শতাধিক ঘোড়া। ঘোড়ার পাশাপাশি ঘোড়াগাড়ি, লাগামসহ নানা সরঞ্জামেরও কেনাবেচা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম নিউজবাংলাকে জানান, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী হাট। ৫০ বছর ধরে চলা এই হাটে ৩ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকায় ঘোড়া পাওয়া যায়। দেশের মানুষ তো কেনেনই, অনেক সময় প্রবাসীরাও ভিডিও কলের মাধ্যমে ঘোড়া কিনে বাড়িতে পাঠান।
৪০ বছর ধরে ঘোড়ার ব্যবসা করছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘এই বাজারে অনেক ভালো ভালো ঘোড়া পাওয়া যায়। তাই এখানেই আসি। দেশের আর কোথাও আমি এমন ঘোড়ার ঘাট দেখি নাই। দেশি, তাজী, ভুইটা, ক্রস এমনকি গাধা সাইজের ঘোড়াও এখানে পাওয়া যায়।’
তবে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে দিন দিন ঘোড়া বিক্রি কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা থেকে আসা মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ‘আমি সিরাজগঞ্জ থাইকে আইসে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা ঘোড়া কিনছি। এহন এই রাইতের বেলা আমার সিরাজগঞ্জ যাওয়া লাগব।
‘যদি থাকার এডা জায়গা থাকত তাইলে রাইতটে থাইকে কাইলকে সকালে যাইতাম। এহন কষ্ট হইলেও রাইতের বেলায় যাওন লাগব।’
ঘোড়া ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন, ‘এই হাটে লাখ লাখ টাকা নিয়ে মানুষ ঘোড়া কিনতে আসে। তাদের একটা নিরাপত্তার বিষয় আছে। এখানে থাকা-খাওয়া তো দূরের বিষয়, বসারও কোনো জায়গা নাই। এসব কারণে দিন দিন ঘোড়া বিক্রি কমে যাচ্ছে।’
হাটের ইজারাদার আব্দুল কুদ্দুস জানান, করোনার কারণে এখন বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। আগে ঘোড়া বিক্রির মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হতো। উপজেলা প্রশাসন যদি ক্রেতাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে বিক্রি বাড়ত।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটুস লরেন্স চিরান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী বা ইজারাদার উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেনি। তারা এলে আমরা ব্যবস্থা নেব। ঘোড়ার হাটকে আরও সমৃদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন সব সময় তৎপর।’