বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে অপেক্ষার শেষ নেই

  •    
  • ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১২:৫২

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রায় ১২ লাখ আবেদনকারী আছেন অনিশ্চয়তায়। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আবেদনকারীদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ২০১৯ সালের আবেদনকারীরাই এখনও লাইসেন্স পাননি।

চালকের ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের নভেম্বরে হালকা যানবাহনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করেন আইনুল মোল্লা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন; আঙুলের ছাপও দেন। পরের বছরের ৩০ আগস্ট তাকে লাইসেন্স দেয়ার কথা ছিল।

এর মধ্যে দুই বছরের বেশি সময় পার হয়। দফায় দফায় সময় দেয়া হলেও লাইসেন্স পাওয়া হয়নি আইনুলের। নতুন করে সময় পড়েছে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর। তত দিনে প্রায় তিন বছর সময় হবে, কিন্তু লাইসেন্স পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।

ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্বে থাকা সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে বলা হয়েছে, লাইসেন্স হয়ে গেলে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।

আইনুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লাইসেন্স করতে দিছি বিদেশ যাইতে, লাইসেন্স না পাওয়ায় বিদেশ যাওয়াও অইল না। এখন বিআরটিএ যে সিলিপ দেয়, দেখাইলে ট্রাফিক কিছু বলে না, তবে কয়েক দিন পরপর নতুন করে মেয়াদ বাড়াইতে বিআরটিএ অফিসে যাইতে হয়।’

আইনুলের মতো প্রায় ১২ লাখ লাইসেন্স প্রার্থী আছেন এ রকম অনিশ্চয়তায়। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আবেদনকারীদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ২০১৯ সালের আবেদনকারীরাই এখনও লাইসেন্স পাননি। তাই যারা ২০২১ সালে আবেদন করেছেন, তাদের সিরিয়াল আসতে কত সময় লাগবে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

জাল, অবৈধ বা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহারের প্রবণতা প্রতিরোধে ২০১১ সাল থেকে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড-সংবলিত ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবস্থা চালু করা হয়।

বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে সব জটিলতা কেটে যাবে। ভোগান্তি ছাড়াই আবেদনকারীরা পর্যায়ক্রমে তাদের লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পেন্ডিং লাইসেন্স সরবরাহে আমরা বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে কাজ দিয়েছি। আশা করি আগামী তিন বা চার মাসের মধ্যে সবাই লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। এভাবে তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের এখন যে প্রোডাকশন আছে, তা আরও বাড়বে।’

তিন মাসের মধ্যে কার্ড পেলে বিআরটিএ থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময় দেয়া হচ্ছে কেন, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘টাইম বাড়িয়ে দিলে তো সমস্যা নেই। কারণ কার সিরিয়াল কখন আসে, তার কোনো ঠিক নাই। তাই সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তবে তারা তার আগেই স্মার্ট কার্ড পেয়ে যাবেন। একটু দেরি হলেও যেন আবার আসতে না হয়, সে জন্যই বাড়তি সময় দেয়া।’

আরও কয়েকজন আবেদনকারী

মিরপুরের বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ গ্রাহকই লাইসেন্স না পেয়ে রসিদে সময় বাড়িয়ে নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

সৈয়দ ফজলুল করিম ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে হালকা যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে এখনও পাননি।

তিনি বলেন, ‘চারবার এসেও লাইসেন্স পাই নাই। আজও পাওয়ার আশায় আসিনি, তবে কাগজের মেয়াদ না থাকলে পুলিশ ঝামেলা করে, তাই মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আসছি।’

২০১৯ সালের অক্টোবরে আবেদন করে এখনও লাইসেন্স পাননি রফিকুল ইসলাম। সাখাওয়াত হোসেন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে এখনও পাননি। তাকে নতুন সময় দেয়া হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর।

জটিলতা শুরু কীভাবে

বিআরটিএ সূত্র বলছে, জটিলতা শুরু হয় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি। ওই বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিছু লাইসেন্স বুঝে পান আবেদনকারীরা। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে এ কার্যক্রম।

২০১৬ সালে লাইসেন্স দিতে টাইগার আইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের চুক্তি করে বিআরটিএ। টাইগার আইটির সঙ্গে পাঁচ বছরের যে চুক্তি ছিল, তা শেষ হয়েছে বছরখানেক আগে, ২০২০ সালের শুরুতে।

শেষ দুই বছর যে পরিমাণে আবেদন জমা পড়ছিল, তার তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে টাইগার আইটির তথ্যভান্ডারে। ফিঙ্গার স্ক্যানিংও হয়েছে এ কোম্পানির আওতায়, তবে শেষ সময়ে লাইসেন্স ছাপতে বাড়তি অর্থ দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে বিআরটিএ সম্মতি দেয়নি; বিষয়টি সুরাহাও হয়নি। চুক্তি শেষ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে বন্ধ করে রেখেছে সার্ভার।

এ কোম্পানির সঙ্গে কোনো সমাধানে না গিয়ে ৪০ লাখ কার্ড ছাপাতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টারস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর সঙ্গে চুক্তিতে যায় বিআরটিএ, তবে জটিলতা থাকায় আগের প্রতিষ্ঠানের (টাইগার আইটি) কাজ করতে রাজি নয় মাদ্রাজ প্রিন্টিং। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার চুক্তি হয়, তবে কাজ শুরু বা লাইসেন্স ছাপানো শুরু হয়েছে আরও সাত মাস পর।

২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের পর লাইসেন্সের আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই লাইসেন্স ফুরিয়ে যায়। ছাপানো ও কার্ড সরবরাহ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পলিকারবোনেটেড এসব কার্ড বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। নানা জটিলতায় লাইসেন্স দেয়ার কাজ থেমে ছিল প্রায় দুই বছর।

এ অবস্থায় জমে যাওয়া কার্ড সরবরাহে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সঙ্গে বিআরটিএর চুক্তি হয়েছে। অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কার্ড ছাপানো কাজ শুরু করেছে। ছয় মাসের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ১২ লাখ লাইসেন্স সরবরাহ করার কথা রয়েছে।

শুধু পুরোনো নয়, নতুনেও দেরি

পুরোনো লাইসেন্সের তুলনায় সময় কম লাগলেও নতুন লাইসেন্সেরও বেশ দেরি হওয়ার অভিযোগ করেন অনেক গ্রাহক।

তাদের একজন রুবাইয়াত আহমেদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের লাইসেন্স হারিয়ে ফেলায় ৩১ জানুয়ারি নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু আমাকে পরবর্তী যোগাযোগের সময় দেয়া হয়েছে আগামী ২৪ জুলাই। প্রায় ছয় মাস।

‘আমার তো বায়োমেট্রিকও লাগবে না। তাহলে এত সময় লাগছে কেন? সার্ভার থেকে তথ্য ‍যাচাই করেই তো প্রিন্ট দেয়া সম্ভব। না হলে এক মাস সময় লাগতে পারে। এত সময় লাগলে তাহলে ডিজিটাল হয়ে কী লাভ হলো?’

তিনি বলেন, ‘জুলাইতেও লাইসেন্স পাওয়ার কোনো ঠিক নাই। অফিস থেকে বলছে, লাইসেন্স হলে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।’

বিআরটিএ চেয়ারম্যান দাবি করেন, নতুন আবেদনে তেমন সময় লাগছে না।

তিনি বলেন, ‘পুরোনোগুলোতে একটু সময় লাগলেও নতুনগুলো দ্রুত দেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা দিয়ে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) দিলে পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই পেয়ে যাচ্ছেন।’

উল্টো তার অভিযোগ, ‘নতুন যারা লাইসেন্স সরবরাহ করছে বা সেনাবাহিনী যেগুলো সরবরাহ করেছে, তাদের অনেক কার্ড আনডেলিভারড অবস্থায় পড়ে আছে। মেসেজ দিলেও আবেদনকারীরা নিচ্ছে না।’

বিআরটিএ লাইসেন্সের জন্য ২০১৯ সালে যারা আবেদন করেছেন, তাদের কর্তৃপক্ষ ধরিয়ে দিয়েছেন সাময়িকভাবে চলাচলের একটি স্লিপ, যা দিয়ে তারা চালাতে পারবেন গাড়ি, তবে সেই স্লিপ দেখালেও হয়রানিতে পড়তে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে চালকদের।

আবার কোনো কারণে ভুলে কাগজটি নবায়ন না করা থাকলে রাস্তায় পুলিশের মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে জানান তারা।

এ বিভাগের আরো খবর