এক দিনে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে দিনাজপুরে ব্যাহত হয়েছে জনজীবন ও যান চলাচল। সাত ঘণ্টায় রেকর্ড করা হয়েছে ৩০ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এই বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
রাত থেকেই বৃষ্টির ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপদে। শ্রমিকের হাট হিসেবে পরিচিত শহরের ষষ্ঠিতলা মোড়ে কাজের খোঁজে সকালে জড়ো হয়েছেন কয়েকজন দিনমজুর।
তাদের একজন খায়রুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাড়িতে বুড়ি (বউ) আছে। বুড়ি (বউ) মোক (আমাকে) ভোরত (ভোরে) বাড়ি থাকি বাহির হবার (হতে) মানা করিল। মুই (আমি) তাও না শুনিয়া এখানও (ষষ্ঠিতলায়) চলি আসিনু। এখানত আসিতে আসিতে মুই ভিজে গেছু। এখন তো এখানও কোনো কাজও পাছু না। মোক আবার বাড়ি চলি যাবার হবি।’
বৃষ্টির মধ্যে ক্রেতারা আসবে কি না সেই চিন্তায় পড়েছেন ছয়রাস্তা মোড়ের হোটেল শ্রমিক আকাশ।
তিনি বলেন, ‘যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এতে আমাদের হোটেলে কাস্টোমার আসবে কোথায় থেকে? হোটেলে কাস্টোমার না আসলে মহাজন আমাকে বেতন কোথায় থেকে দেবে? বৃষ্টির জন্য লোক একেবারেই নাই। এখন চিন্তা করতেছি, কী করব।’
আবহাওয়া অফিস জানায়, দিনাজপুরে শুক্রবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায়। সেখানকার তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, নওগাঁ, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
মেহেরপুর
শুক্রবার সকাল ৮টার পর থেকে মেহেরপুরে শুরু হয়েছে দমকা বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। মেঘাছন্ন রয়েছে আকাশ। ছুটির দিন শীতের সকালে বৃষ্টি হওয়ায় সড়কে মানুষের চলাফেরা ছিল তুলনামূলক কম।
বাড়ি থেকে কাজের জন্য বের হওয়া অনেকেই বৃষ্টির জন্য রাস্তায় আটকা পড়েন। তাদের অনেকেই রাস্তার পাশের যাত্রী ছাউনি ও দোকানে আশ্রয় নেন।
ভ্যানচালক শেরমান বলেন, ‘বাড়ি থেকে যখন বের হই তখন বৃষ্টি ছিল না। বাজারে এসেই বৃষ্টি শুরু হইছে। বৃষ্টির কারণে আমরা ভাড়া মারতে পারছিনি। আকাশে মেঘ আছে, বারবার মেঘ ডাকছে। ভ্যানে যাত্রীরা উঠছে না।’
অসময়ের বৃষ্টিতে চিন্তায় পড়েছেন এই জেলার কৃষকরা। স্থানীয় কৃষক আমজাদ হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, গমের শীষ ও মসুর ডালের ফুল ধরার সময় এখন। এ সময় হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাসের কারণে মসুরের ফুল ও গমের শিষের ক্ষতি হবে। এতে ফলন যাবে কমে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাতের দিকে বৃষ্টি কমে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে। তবে বৃষ্টি কেটে তাপমাত্রা কমে আবারও শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।
নীলফামারী
নীলফামারীতে শুক্রবার ৬টা থেকে ৯টা পযর্ন্ত ১১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, শনিবারও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবার এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।