আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কারও ক্যানসার শনাক্ত হলে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তা নিরাময়যোগ্য। তাই লক্ষণ দেখা দেয়ার আগেই ক্যানসার শনাক্তকরণে জাতীয় স্ক্রিনিং সেবা চালুর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় ক্যানসার রোগতত্ত্ববিদ ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন এই আহ্বান জানান।
‘ক্যানসারের আর্থ-সামাজিক প্রভাব ও সবার জন্য ক্যানসার সেবা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লতিফা শামসুদ্দিন, গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
বক্তারা স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানসম্মত সংগঠিত কর্মসূচি চালুর ওপর জোর দেন। এ জন্য সরকারের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরিচালনা ও তদারকির সঙ্গে যুক্ত করা দরকার।
হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘দেশে কোনো জাতীয় ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি নেই। কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একটি প্রকল্পের অধীনে স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যানসারের স্ক্রিনিং চলছে। দুঃখজনক হলেও সত্য চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য উপাদানগুলো সমানতালে বেড়ে উঠতে পারেনি। শুধু চিকিৎসা নয়, ক্যানসার নিয়ন্ত্রণের সব উপাদান মিলেই ক্যানসার সেবা-এ ধারণা সব ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হওয়া জরুরি।
‘বাংলাদেশ সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাক্ষরকারী দেশ। তাতে অন্যান্য রোগের মতো ক্যানসার সেবা জনগণের জন্য নিশ্চিত করার অঙ্গীকার আছে, তবে বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে শুধু সরকারের পক্ষে এটা সম্ভব নয়।’
আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার রোগী নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার রোগী মারা যায়।
প্রস্তাব
আলোচনা সভায় বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
১. ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে সঠিক পরিকল্পনার জন্য সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। একমাত্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন চালু আছে, কিন্তু জনগোষ্ঠীভিত্তিক নিবন্ধন এখনও চালু করা যায়নি। এ কারণে দেশে ক্যানসার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারসহ গুরুত্বপূর্ণ নিজস্ব কোনো পরিসংখ্যান নেই। এ জন্য জরুরিভিত্তিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি চালু করতে হবে।
২. প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার প্রতিরোধে হেপাটাইটিস-বি ও হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকাদান এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার বলে আলোচনায় তুলে ধরা হয়।
৩. রোটারি ইন্টারন্যাশনালসহ স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক ক্যানসার সেবা প্রদানকারী সংগঠনগুলোকে জাতীয় কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা দরকার।
৪. ক্যানসার সোসাইটি, ক্যানসার ফাউন্ডেশন, কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট, স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ওজিএসবিসহ ক্যানসার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে প্রতিরোধ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা উচিত।
৫. দেশের বিত্তবান ব্যক্তিদের মানবসেবায় অলাভজনক ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে তোলা এবং বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালগুলোর শতকরা ১০ ভাগ সেবা গরিব ও দুস্থ রোগীকে বিনা মূল্যে দেয়া।