বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করের টাকায় সঞ্চয়পত্রের সুদ গুনছে সরকার

  •    
  • ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২২:২৮

ডিসেম্বরে সরকার তার কোষাগার থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ ৪৩৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলছেন, এতদিন বেশি সুদে ঢালাও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করার ‘মাশুল’ এখন দিতে হচ্ছে সরকারকে।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ বাজেটের অন্যান্য খরচ মেটাতে বছরের পর বছর ধরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ায় এখন এর উল্টো দিকটা দেখতে হচ্ছে সরকারকে।

গত ডিসেম্বরে যে টাকার সঞ্চয়পত্র সরকার বিক্রি করেছে, তার চেয়ে ৪৩৬ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে সুদ-আসল পরিশোধে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে সরকার তার কোষাগার থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ ৪৩৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

অথচ ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও সুদ-আসল পরিশোধের পর সরকারের কোষাগারে ১ হাজার ৪৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা ছিল, যাকে বলা হয় নিট বিক্রি।

অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলছেন, এতদিন বেশি সুদে ঢালাও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করার ‘মাশুল’ এখন দিতে হচ্ছে সরকারকে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল দ্বিগুণেরও বেশি, ২০ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা।

সবশেষ ডিসেম্বর মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ৪৩৬ কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, গত ডিসেম্বরে যে টাকার সঞ্চয়পত্র সরকার বিক্রি করেছে, তার চেয়ে ৪৩৬ কোটি টাকা বেশি চলে গেছে সুদ-আসল পরিশোধে।

ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে গত কয়েক বছর ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এতে সরকারের ঋণের বোঝা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।

বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার উপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপরও বাড়তে থাকে বিক্রি।

অবশেষে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দিয়েছে সরকার।

এখন এর প্রভাব পড়ছে বিক্রিতে। আর এতে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা লাঘবের পথ মসৃণ হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, মুনাফার হার কমানোয় সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ আগামী দিনগুলোতে আরও কমবে। এক ধরনের স্বস্তিতে থাকবে সরকার।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর সুদের হার কমানো ছাড়া সরকারের উপায় ছিল না। গত অর্থবছরে সুদ-আসল বাবদ সরকারকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। এটা একটা বিশাল অঙ্ক; বাজেট থেকে সুদ-আসল বাবদ এত টাকা চলে গেলে অন্য কাজ কীভাবে হবে।

‘তাই আমি মনে করি, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে সরকার ঠিক কাজটিই করেছে। এখন বিক্রি আরও কমে আসবে; সরকারকে বেশি সুদ পরিশোধ করতে হবে না। ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। সে কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে যতো কম ঋণ নেয়া যায়, ততোই ভালো।’

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

সঞ্চয়পত্র থেকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। মূল বাজেটে এ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজটে সেই লক্ষ্য বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়।

তবে বছর শেষে দেখা যায়, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে মূল বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি নিয়েছে ৩২ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি নিয়েছে প্রায় তিন গুণ।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়ে দিয়েছে সরকার।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেত, এখনও সেই হারে পাওয়া যাবে।

এর আগে ২০১৫ সালে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশের মতো কমিয়েছিল সরকার।

এ বিভাগের আরো খবর