ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণে ধীরগতি, ভোট কম পড়াসহ যেসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনায় আগামী সপ্তাহে বৈঠক হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে।
আগামী বৃহস্পতিবার কমিশনের কারিগরি কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সচিব হুমায়ূন কবীর খোন্দকার।বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে কমিশন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
ইসি সচিব বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার টেকনিক্যাল কমিটি বসবে। তারা যা প্রস্তাব করবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে। ইভিএমের সব সমস্যা সেই বৈঠকে ডিটেইলস পর্যালোচনা করা হবে।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গঠিত এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ চালু করে। তবে সে সময় যে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেয়া হতো, তাতে ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কমিশন নতুন আরেকটি যন্ত্র নিয়ে আসে। আর বর্তমান কমিশনের আমলে ব্যবহার করা হচ্ছে আরেক ধরনের যন্ত্র।
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দামের বেশি উন্নত মেশিন তৈরি করে নিয়েছে এই কমিশন।বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। এই যন্ত্রে দুটি ইউনিট। একটি নিয়ন্ত্রণ ইউনিট। আরেকটি ব্যালট ইউনিট। নিয়ন্ত্রণ ইউনিটে আঙুলের ছাপ মিললেই ব্যালট ইউনিটে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ব্যালট পেপার ওপেন হয়।
তবে যাদের আঙুলের ছাপ মেলে না, তারা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে ব্যালট ইউনিট ওপেন করে ভোট দিতে পারবেন। তবে মোট ভোটারের এক শতাংশকে এই সুবিধা দিতে পারবেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই ইভিএমের ব্যবহার বাড়াতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি কয়েক শ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট নেয়া হয়েছে এই যন্ত্রের মাধ্যমে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এই যন্ত্র ব্যবহারের কথা আছে।
তবে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এই যন্ত্রের ব্যবহারের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, এই যন্ত্রে ভোট কারচুপি করা সম্ভব, যদিও তা নাকচ করেছে নির্বাচন কমিশন। তারা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছে, এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। কমিশনের সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কেউ এগিয়ে আসেনি।
ইভিএমে সহজে ভোটের ফল পাওয়া যায়। তবে অনেক ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে ভোটে ধীরগতি, এমনকি অনেকের ভোট দিতে না পারার ঘটনা ঘটেছে।
এখন পর্যন্ত ইভিএমে যত ভোট হয়েছে, তার বেশির ভাগ নির্বাচনেই ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের নিচে। ইভিএমের চেয়ে ব্যালট পেপারে ভোট পড়ার হার বেশি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু আঙুলের ছাপ মুছে যাওয়াজনিত সমস্যা নয়, অনেক সময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাও ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না নেয়ার কারণেও ভোটের ধীরগতি হয়।