যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে যে কথা উঠেছে, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তদন্ত বা কিছু করার ক্ষমতা নেই বলে জানানো হয়েছে। সরকারের কোনো সংস্থা তদন্ত করলে তারা এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেবে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সভা শেষে কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত করার সক্ষমতা এবং আইনি কাঠামো নেই। সরকারের যেসব এজেন্সি আছে, তারা তদন্ত করলে পরে কমিশন তা ব্যবস্থা নেবে।’
বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা পরস্পরকে ঘায়েল করতে নানা কথা বলছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাতীয় সংসদে প্রথমে এই বিষয়টি তুলে ধরেন। জানান, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। লবিস্টের ফি পরিশোধে বিএনপি কোন প্রক্রিয়ায় টাকা পাঠাল, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদককে অনুরোধ করেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে দেন চিঠি।
পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া আয়-ব্যয়ের হিসাবে লবিস্ট নিয়োগের ব্যয় দেয়া হয়েছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, যদি দেয়া না থাকে, তাহলে কমিশন যেন ব্যবস্থা নেয়।
বিএনপি অবশ্য লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তারা নয়, একজন প্রবাসী বাংলাদেশি এই নিয়োগ করেছেন। তবে সেই বাংলাদেশি কে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাতীয় সংসদে প্রথমে এই বিষয়টি তুলে ধরেন। জানান, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। লবিস্টের ফি পরিশোধে বিএনপি কোন প্রক্রিয়ায় টাকা পাঠাল, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদককে অনুরোধ করেন তিনি। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে দেন চিঠি।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন এই বৈঠক বসে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সভায় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও বেগম কবিতা খানম উপস্থিত ছিলেন। চোখে রক্তক্ষরণ হওয়ায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার কমিশনে আসলেও বৈঠক শুরুর আগেই চলে যান।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.) তিনি এবং তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় সভায় অংশ নেননি।
সভা শেষে ইসি সচিব বলেন, ‘বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে চিঠি দিয়েছেন, কমিশন বৈঠকে তা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনে যে অডিট রিপোর্ট জমা দেয়, তা পর্যালোচনা করে দেখা হয়।
‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে এমন কোনো তথ্য নেই যে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তাছাড়া বিদেশে অর্থ ব্যয় করা হলে তা তদন্ত করার আইনি কাঠামো ও সক্ষমতা নেই। আইনি কাঠামোতে তথ্য পাচারসংক্রান্ত বিষয় পড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের যেসব এজেন্সি অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিষয় তদন্ত করতে পারে, তারা তদন্ত করে নির্বাচন কমিশনকে দিলে কমিশন তা পর্যালোচনা করে দেখবে।’
বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল বলে তথ্য আছে। এই দলটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান ছিল সরকারের পক্ষ থেকে।
তবে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘যেহেতু কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়, ফলে তাদের বিষয়ে কমিশনের কিছু করণীয় নেই।’
কমিশনের এই সিদ্ধান্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান ইসি সচিব।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে এমন কোনো তথ্য নেই যে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তাছাড়া বিদেশে অর্থ ব্যয় করা হলে তা তদন্ত করার আইনি কাঠামো ও সক্ষমতা নেই। আইনি কাঠামোতে তথ্য পাচারসংক্রান্ত বিষয় পড়ে না।
লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি প্রমাণ হলে কমিশনের এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে কি না- এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, ‘এই রকম বিষয় যদি প্রমাণিত হয় এবং কমিশনকে যদি জানানো হয়, তাহলে তা কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।'
বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকারও লবিস্ট নিয়োগ করেছে। বিষয়টি আপনারা খতিয়ে দেখেছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এই ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। আজকের বৈঠকে যে আলোচ্য বিষয়, সেখানে এই ধরনের কিছু আসেনি।’
ইসি সচিব আরও জানান, কমিশন বৈঠকে দ্য ডিলিমিটেশন অ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনের বাংলা পাঠ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে হোটেল সোনারগাঁয়ে একটি অনুষ্ঠান করে এর মোড়ক উন্মোচন করা হবে।
৭১-এর বীর সেনানীদের জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ কথাটি লেখা থাকবে বলেও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। সেদিন বিশিষ্ট ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এই লেখা সংবলিত পরিচয়পত্র দেয়া হবে এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সব মুক্তিযোদ্ধার কাছে তা পৌঁছে দেয়া হবে।’
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর, ইসির যুগ্মসচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।