ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক সাত হাজার পয়েন্টে টিকে থাকা নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ হচ্ছে। কখনও টানা কয়েকদিনের পতনে নেমে যাচ্ছে এই অবস্থান থেকে, আবার কয়েক দিনের টানা উত্থানে ছাড়াচ্ছে এই সীমা।
গত সপ্তাহের শেষ দুই দিন আর চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবস পতনে সূচক ৬ হাজার ৯০০ পয়েন্টের কাছাকাছি নেমে আসার পর টানা দুই দিনের উত্থানে তা আবার ৭ হাজারের ওপরে উঠে।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার শুরুতে বেড়ে গিয়েও এক পর্যায়ে বেলা ১২টার কিছু সময় আগে ৬ হাজার ৯৯৬ পয়েন্টে নেমে আসে সূচক। তবে শেষ আড়াই ঘণ্টায় সেখান থেকে বেড়ে সূচক দাঁড়ায় ৭ হাজার ২৩ পয়েন্টে।
দিন শেষে সূচকের অবস্থান ধরে রাখায় প্রধান ভূমিকা ছিল ব্যাংক খাতের। যে ১০টি কোম্পানি সূচকে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করেছে, তার মধ্যে ৬টিই ব্যাংক।
বাজারে উত্থান পতনের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ আবার নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন। লেনদেনেই সেই বিষয়টি স্পষ্ট।
জানুয়ারির শুরু থেকে বাজারে চাঙাভাব ফেরার পর লেনদেন বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দুই হাজার কোটির ঘরের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।
তবে এখন তা সেখান থেকে অনেকটাই কম। লেনদেন এখনও এক হাজার কোটি টাকার বেশি হলেও দেড় হাজার কোটির ঘর ছুঁতেই পারছে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের চিত্র
গত বছরের মে থেকে জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত সূচক এভাবে ৬ হাজার পয়েন্টে টিকে থাকা নিয়ে লড়াই হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে জয় আসার পর সূচক ৭ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায় আগস্টে। তখন আট হাজার পয়েন্টের দিকে ছোটার আলোচনা তৈরি হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে দর সংশোধনে তা আর হয়নি।
দর সংশোধনের প্রথম এক মাসে কয়েকটি বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকায় সূচক বাড়তে থাকে। তবে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বড় মূলধনি সেই কোম্পানিগুলোও দর হারাতে থাকে।
এই ধারা চলতে থাকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এর মধ্যে সূচকের অবস্থান সাড়ে ছয় হাজারে নেমে আসে কি না, এমন আশঙ্কাও দেখা দেয়। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। গত বছরের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রায় পুরোটাতেই দেখা যায় চাঙাভাব। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের মতো প্রাণ ফেরেনি।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বেড়েছে ১৬৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর, কমেছে ১৭২টির। দর পাল্টায়নি ৪২টির।
লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে লেনদেন টানা হাজার কোটি টাকার বেশি হয়েছে।
লেনদেনে বৃহস্পতিবার সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো। ৮২ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে এদিন। এছাড়া ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতের ৬৯ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
সূচক বৃদ্ধিতে সিমেন্ট, তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি ছিল উল্লেখযোগ্য।
যে সব কোম্পানির দর বৃদ্ধিতে সূচকের উত্থান
বৃহস্পতিবার সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল সদ্য তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংকের। কোম্পানির শেয়ার দর ৯.৩৭ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ৪.৪৬ পয়েন্ট।
বৃহস্পতিবার সূচক ইতিবাচক থাকায় প্রধান ভূমিকায় ছিল ব্যাংক খাত
এনআরবিসির দর ৬.২ শতাংশ বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ৪.৪৫ পয়েন্ট। ওয়ালটন সূচক বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে ৩.৮৮ পয়েন্ট।
বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর শেয়ার দর বৃহস্পতিবার বেড়েছে দশমিক ৩২ শতাংশ। এতে সূচক বেড়েছে ৩.৮৮ পয়েন্ট।
এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের সূচক বাড়িয়েছে ২.৫৬ পয়েন্ট। এছাড়া সিটি ব্যাংক ২.৪১ পয়েন্ট, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২.২৩ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। এ তালিকায় আছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, যার শেয়ারের দর বৃদ্ধি সূচক বাড়াতে সহায়ক ছিল ১.৯৬ পয়েন্ট।
সোনালী পেপার ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকও ছিল এ তালিকায়।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিই সূচক বাড়িয়েছে ২৯.৩৯ পয়েন্ট।
অন্যদিকে দর পতনের কারণে সূচক নিচের দিকে টেনে নামানোর চেষ্টায় ছিল বেশ কিছু কোম্পানি। এর মধ্যে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের দর ২.২৬ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৭.৮৮ পয়েন্ট।
আর এ কে সিরামিকসের দর ৬.৪৫ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৬.১৩ পয়েন্ট।
পাওয়ার গ্রিড, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, তিতাস গ্যাস, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিএসআরএম লিমিটেড, আইসিবি, ইউনিলিভার ও বিএসআরএম স্টিলও সূচক ফেলেছে।
এই ১০টি কোম্পানি সূচক টেনে নামানোর চেষ্টা করেছে
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৩৬.৭৬ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির ১০ কোম্পানি
বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে নাহি অ্যালুমিনিয়ামের ৯.৯৫ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৩ টাকা।
সদ্য তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯৪ শতাংশ। এছাড়া বিডি থাই ফুডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯০ শতাংশ।
আরও চারটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে নয় শতাংশের বেশি। এর মধ্যে আছে কাট্টালি টেক্সটাইল প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস।
আট শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে দুটি কোম্পানির। এর একটি বিডি ওয়েল্ডিং, যার দর বেড়েছে ৮.৭২ শতাংশ, বেঙ্গল উইসডমের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.০৩ শতাংশ।
এছাড়া আরামিট সিমেন্টের দর বেড়েছে ৬.৪১ শতাংশ।
দর পতনের দশ কোম্পানি
এদিন সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর কমেছে আর এ কে সিরামিকসের। কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এটি বিনিয়োগকারীদের পছন্দ হয়নি। যে কারণে শেয়ার দর কমেছে ৬.৪৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৫.৫৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্সের দর কমেছে ৪.৩৪ শতাংশ। সাভার রিফ্যাক্টরিজির দর কমেছে ৪.৩০ শতাংশ।
প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.৯৯ শতাংশ, রিং সাইন টেক্সটাইলের দর ৩.৬৭ শতাংশ, শাশা ডেনিমের দর ৩.৬৩ শতাংশ, এএমসিএল (প্রাণ) দর ৩.৩০ শতাংশ, এপেক্স ফুডের দর কমেছে ৩.১৯ শতাংশ।
লেনদেনে সেরা ১০
বৃহস্পতিবার টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের। এদিন কোম্পানিটির ৮৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার ৫৭ রাখ ৩৬ হাাজর ৪৮৩টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে প্রকৌশল খাতে
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমসের ১ কোটি ৫৮ লাখ ৭ হাজার ৫৭৩টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৪৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকায়।
সদ্য তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ব্যাংকের ৩ কোটি ৫ লাখ ১৩ হাজার ১৫৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৪১ কোটি ১২ লাখ টাকায়।
ফরচুন সুজে ৩৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৯২ লাখ টাকার।
লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানির তালিকায় ছিল আর এ কে সিরামিক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ওরিয়ন ফার্মা, লাফার্জ হোলসিম ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্স