নেত্রকোণার বহুল প্রতীক্ষিত শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণকাজ অবশেষে শুরু হয়েছে।
দশ তলা বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবনের টেস্ট পাইলের মধ্য দিয়ে বুধবার বিকেলে নির্মাণকাজ শুরু হয়।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) সেলিম আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, অবকাঠামো নির্মাণের ৪৪টি প্যাকেজের মধ্যে তিনটি প্যাকেজের কাজ শুরুর আদেশ (নোটিফিকেশন অব এ্যাওয়ার্ড) দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৩৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট, ১১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবন ও ১০৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরুজ্জামান খানকে মাটি ভরাট কাজের আদেশ দেয়া হয়। এরই মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ করেছে তারা।
একই বছরের ৩০ নভেম্বর টিবিএল ও ইইএল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটিকে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ ও বিশ্বাস ট্রেডিং কনস্ট্রাকশনকে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়।
টিবিএল ও ইইএল বুধবার থেকে অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজ শুরু করেছে। শুরুতে তারা টেস্ট পাইলের কাজ করছে।
অন্যদিকে বিশ্বাস ট্রেডিং কনস্ট্রাকশনও সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। দু’তিন দিনের মধ্যে তারাও কাজ শুরু করবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেকটি কাজের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে দেড় বছর। আশা করা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ হবে। অন্যান্য প্যাকেজের কাজগুলোও প্রক্রিয়াধীন।’
নিউজবাংলাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এনামূল হক আরাফাত জানান, ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে জেলা শহরের খুব কাছাকাছি রামপুর, কান্দুলিয়া, ময়মনসিংহ রুহী, রায়দুম রুহী, সহিলপুর ও গোবিন্দপুর মৌজায় ৩০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৯৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়।
কিন্তু ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হলেও মহামারি করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হয়নি। পরবর্তীতে প্রল্পলের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু না হওয়ার বিষয়টি তখন এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এ নিয়ে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে করা হয় মানববন্ধনও। তবে শেষ পর্যন্ত কাজ শুরু হওয়ায় খুশি তারা।
নিউজবাংলাকে নাগরিক সংগঠন ‘জন উদ্যোগ’ এর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, ‘বহু প্রতীক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা অনেক খুশি। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি নেত্রকোণাবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ উপহার। তাই আমরা বর্তমান সরকারের আমলেই এটির একটি পূর্নাঙ্গ রূপ দেখতে চাই।’
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে নেত্রকোণা শহরের রাজুরবাজার এলাকায় অবস্থিত সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) একটি ভবনে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদের অধীনে বর্তমানে চারটি বিষয়ে মোট ২১০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
চলতি বছরে ভর্তির প্রক্রিয়াধীন আছে আরও ১২০ শিক্ষার্থী। অবকাঠামো নির্মাণ হওয়ার পর আরও কিছু অনুষদ ও বিষয় চালু করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।