বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ডের পর রেকর্ড

  •    
  • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২৩:৫২

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরা নিজেরাও ভাবিনি নিট খাতের রপ্তানি এতটা বাড়বে। এই যে মহামারির মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন হচ্ছে, তা কিন্তু নিট পোশাকের ওপর ভর করেই। মানুষ যত সমস্যায়ই থাকুক, যত অর্থ সংকটেই থাকুক না কেন, অতি প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতেই হয়। সে কারণে নিট পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।’

আঠার বছর আগে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন অনেকেই। দেশি-বিদেশি গবেষণা সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা সে সময় বলেছিলেন, ‘কোটা সুবিধা’ উঠে গেলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না; বিলীন হয়ে যাবে এ খাত। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবে; একটা বড় ধরনের আর্থ-সামাজিক বিপর্যয় নেমে আসবে।

কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি; উল্টো আশির্বাদ বয়ে এনেছিল ওই ‘কোটা সুবিধা’ উঠে যাওয়া। ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ‘কোটা সুবিধা’ উঠে যায়। তারপর থেকেই তরতর করে বাড়তে থাকে পোশাক রপ্তানি। আর পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি; বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।

২০০৪ সালে ‘কোটা সুবিধা’ উঠে যাওয়ার বছরে, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে (১২ মাসে) পোশাক রপ্তানি থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি আয় করেছিল বাংলাদেশ। আর সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসেই (এক মাস) তার সমান ৪ দশমিক শূণ্য ৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। বর্তমান বিনিময়হার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩৫ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।

এই আয় এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এর আগে পোশাক রপ্তানি থেকে এক মাসে সর্বোচ্চ আয় ছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে, ৪ দশমিক শূণ্য ৪ বিলিয়ন ডলার।

ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে সবমিলিয়ে ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। যা এক মাসের হিসাবে এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানুয়ারি মাসে আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।

এতে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসে সার্বিক পণ্য রপ্তানি থেকে আয় কমলেও পোশাক রপ্তানি থেকে আয় বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

মহামারিকালে কম দামি পোশাকে ভর করেই রপ্তানিতে চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্ক ছড়ালেও অতি প্রয়োজনীয় কম দামের পোশাক বিশেষ করে নিট পোশাক রপ্তানি কমবে না বলে জানিয়েছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা।

বুধবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ২ হাজার ৯৫৫ কোটি (২৯.৫৫ বিলিয়ন) ডলার রপ্তানি আয় করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এর মধ্যে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারই এসেছে পোশাক থেকে। অর্থাৎ এই সাত মাসে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে বা ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশই তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের দুটি উপখাত ওভেন ও নিট। আগে নিটের চেয়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। বেশ কয়েক বছর ধরে রপ্তানি বাণিজ্যে এই দুই খাতের অবদান ছিল কাছাকাছি। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ওভেনকে পেছনে ফেলে ওপরে উঠে আসে নিট খাত।

ইপিবি তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর পোশাক রপ্তানি থেকে সবচেয়ে চেয়ে বেশি আয় হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। ওই অর্থবছরে ওভেন পোশাক থেকে এসেছিল ১৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আর নিট থেকে এসেছিল ১৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার।

২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে মোট ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক থেকে এসেছিল ১৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। আর নিট পোশাক থেকে এসেছিল ১৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার।

২০২০-২১ অর্থবছরে পাল্টে যায় চিত্র; নিট থেকে আসে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার। আর ওভেন থেকে আসে ১৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। মোট আয় হয় ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেই ব্যবধান আরও বেড়েছে। এই সাত মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে যে ২৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে তার মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১৩ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। আর ওভেন থেকে এসেছে ১০ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পোশাক রপ্তানি থেকে যে বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে তার মধ্যে ৫৫ দশমিক ৩৪ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩শতাংশ। আর ওভেনে রপ্তানি বেড়েছে ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আমরা নিজেরাও ভাবিনি নিট খাতের রপ্তানি এতটা বাড়বে। এই যে মহামারির মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন হচ্ছে, তা কিন্তু নিট পোশাকের ওপর ভর করেই। মানুষ যত সমস্যায়ই থাকুক, যত অর্থ সংকটেই থাকুক না কেন, অতি প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতেই হয়। সে কারণে নিট পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানের ইতিবাচক ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। সে বিবেচনায় গত অর্থবছরের মতো এবারও একটা ভালো বছর পার করব বলে মনে হচ্ছে।’

ওভেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ও এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহামারির কঠিন সময়ে কম দামি পোশাক রপ্তানি করছি আমরা। বায়াররা অতি প্রয়োজনীয় পোশাক কিনেছেন। সে কারণে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। এখন অবশ্য ওভেনও ভালো রপ্তানি হচ্ছে। প্রচুর অর্ডার আসছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের ভালো দিন যাচ্ছে বলা যায়।’

অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে এখন রপ্তানি খাত। সত্যিই অবাক করার মতো উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে এই খাতে। এই যে করোনার ধকল সামলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে চলেছে রপ্তানি আয়।’

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে মোট ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। পোশাক রপ্তানি থেকে লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।

এ বিভাগের আরো খবর