মিয়ানমারের জবরদস্তি বাস্তুচ্যুত ১১ মিলিয়ন নাগরিককে নিজ দেশে ফেরাতে আসিয়ানের প্রভাবশালী সদস্য ও বিশ্বের অন্যতম ধনী মুসলিম দেশ ব্রুনাই দারুসসালামের শক্তিশালী ভূমিকা চায় বাংলাদেশ।
বুধবার ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো এরিওয়ান পেহিন ইউসুফের সঙ্গে এক ভিডিও কলে এই অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় দুই মন্ত্রী নববর্ষের শুভেচ্ছাও বিনিময় করেন।
আলাপকালে মোমেন জানান, বাংলাদেশ ব্রুনাইয়ের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
দুই মন্ত্রী বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো পর্যালোচনা করেন এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে দেখতে সম্মত হন।
মোমেন বাংলাদেশ থেকে ১১ মিলিয়নের বেশি মিয়ানমারের নাগরিককে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসনে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে তিনি এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আসিয়ানকে আরও মনোযোগী হওয়ার অনুরোধ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট আরও প্রকট হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং এই অঞ্চলের জন্য সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির শঙ্কা বাড়বে। এই সংকট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক।’
তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে আস্থা তৈরির ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
আলোচনাকালে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশের ওপর বিশাল বোঝা চেপে বসার কথা স্বীকার করে দাতো এরিওয়ান ইউসুফ তার পূর্ণ সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের চাপানো ও সৃষ্ট এই সংকট বাংলাদেশের প্রতি অন্যায্য ও অন্যায়।
দাতো এরিওয়ান ইউসুফ আশা প্রকাশ করেন, মিয়ানমারের সব পক্ষ বাস্তুচ্যুত জনগণকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বসম্মতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে এবং এই সংকটের একটি টেকসই সমাধান আনতে ব্রুনাই দারুসসালাম আন্তরিকভাবে কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা সম্ভাবনার তুলনায় এখনো অনেক কম।
আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্যাকেজ এবং এক শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাবিত সুযোগের কথা তুলে ধরেন ড. মোমেন। দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মানুষের পারস্পরিক সুবিধার জন্য এই সুযোগ গ্রহণে তিনি ব্রুনাইয়ের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করেন।
দাতো এরিওয়ান ইউসুফ বাংলাদেশ থেকে আম আমদানিতে তার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজ করতে বিমান পরিষেবা চুক্তি সম্পাদনের ওপর জোর দেন।
ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ব্রুনাই তার পেট্রো-রাসায়নিক খাত সম্প্রসারণ করছে, যা অদূর ভবিষ্যতে দেশটিতে আরও বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে উচ্চ পর্যায়ে সফরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনার সময় দাতো ইউসুফ মহামারির কারণে ২০২০ সালে স্থগিত হয়ে যাওয়া ব্রুনাইয়ের সুলতানের বাংলাদেশে সফরের বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানান।
মোমেন প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানান এবং উভয় মন্ত্রী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণে একমত হন।