মুজিবুর রহমান। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী। বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন তামহা সিকিউরিটিজে। লেনদেন কোড নম্বর ৩৯৮৫। ২০০৭ সালে পেনশনের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন ৭০ ঊর্ধ্ব এই বিনিয়োগকারী। ১৩ লাখ টাকার বিনিয়োগের পোর্টফোলিও এখন পুরোটাই শূন্য।
আরেক বিনিয়োগকারী ফখরুল ইসলাম, যার লেনদেনের কোড ১৫৪৮। তিনিও এই সিকিউরিটিজ হাউজে বিনিয়োগ করে হারিয়েছেন সারা জীবনের সঞ্চয়।
এমন অবস্থায় নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান দিতে তামহা সিকিউরিটিজের প্রায় অর্ধশত বিনিয়োগকারী সংবাদ সম্মেলনে আসেন বুধবার।
পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) এর হল রুমে এই আয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তামহা সিকিউরিটিজের লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুই মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।’
গত বছরের ২৮ নভেম্বর তামহা সিকিউরিটিজ নিজ থেকেই শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয়। এরপর গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একই বছরের ৯ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তামহা সিকিউরিটিজের লেনদেন স্থগিত করে।
এরপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বারবার সহযোগিতা চাইলেও তাদের পক্ষ থেকে শুধু আশ্বাস দেয়া হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ডিএসইতে এখন পর্যন্ত নগদ টাকা ফেরত পেতে ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার আবেদন জমা হয়েছে।
সাংবাদ সম্মেলনে মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমার পেনশনের পুরো টাকাই তামহা সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছিলাম। তারা দুটি সফটওয়ারের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করত। একটিতে আমাদের পোর্টফোলিওতে শেয়ার আছে দেখানো হতো। আর প্রকৃত যে সফটওয়্যার- সেটিতে কোনো শেয়ার নেই।’
তিনি তার পোর্টফোলিও প্রদর্শন করে বলেন, একটি তামহা সিকিউরিটিজের, সেটিতে বিনিয়োগের বিপরীতে শেয়ার আছে দেখানো হচ্ছে। আর সিডিবিএলের যে পোর্টফোলিও, সেটিতে কোনো শেয়ার নেই।
এ অবস্থায় জন্য তামহা সিকিউরিটিজের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ডিএসই দুর্বল মনিটরিং ও সিডিবিএলের নজরদারির অভাবকে দায়ী করেন।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘ডিএসই তাদের লাইসেন্স দিয়েছে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনা বেচার ব্যবসা করতে। তারা কীভাবে ব্যবসা করছে সেটিও তাদের মনিটরিং করার কথা। কিন্তু ডিএসইর গাফিলতির কারণে ব্রোকারেজ হাউজগুলো নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা টাকা হারাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলামকে উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘আমরা ধারণা করছি তামহা সিকিউরিটিজের মালিকই বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তাই যতদ্রুত সম্ভব তাকে বিচারের আওতায় এসে আমাদের টাকা/শেয়ার ফেরতের উদ্যোগ নিন।’
এরই মধ্যে তামহা সিকিউরিটিজের সব ধরনের ব্যাংক লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে এ বিষয়ে অনুরোধ জানালে গত ৫ জানুয়ারি এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ নির্দেশনার ফলে তামহা সিকিউরিটিজ তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলতে বা স্থানান্তর করতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ একাধিক ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করতেন। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক ছিল অন্যতম।
যাদের বিও হিসাবে তামহা সিকিউরিটিজের শেয়ার আছে সেগুলো স্থানান্তরের জন্য ডিএসইর পক্ষ থেকে নোটিশ করা হয়। তাতে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের বৃহৎ স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন ও ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় দুই হাজার বিও হিসাব ছিল। আর প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় ছিলেন ডেল্টা হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসক হারুনুর রশীদ। তিনিই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তামহা সিকিউরিটিজকে নিয়ে গত দেড় বছরের বেশি সময়ে তিনটি ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০২০ সালের জুনে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও ২০২১ সালের জুনে ৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বানকো সিকিউরিটিজের লেনদেন স্থগিত করে ডিএসই।