রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের সরু রাস্তার পাশে বালুমাটিতে মিশে আছে রক্ত। এক পাশে পড়ে আছে একটি মাফলার, আরেক পাশে একটি টুপি।
জমাট রক্তের ওপর কেউ একজন রেখে গেছেন পাঁচটি লাল গোলাপ। ঠিক তার পাশেই দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেলের দুর্ঘটনাস্থলে বুধবার সকালে অনেকেই গেছেন। দুর্ঘটনার ২০ ঘণ্টা পরও সেখানে দেখা গেছে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনার পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। সেখানেই পাথরবাহী পাঁচটি ট্রাক থেকে অল্প অল্প ধোঁয়া বেরোচ্ছে। মাহবুব হাবিব হিমেলের মৃত্যুর খবর শুনে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এই পাঁচটি ট্রাকে আগুন দেন। দুর্ঘটনাস্থলে রক্তের পাশে বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছিলেন শিক্ষার্থী নাঈমা শারমিন। তার সঙ্গে হিমেলের পরিচয় ছিল না। তবে এক অজানা বন্ধনে তিনি ছুটে এসেছেন। একই ক্যাম্পাসের আরেক সহপাঠীর এই চলে যাওয়ার কষ্ট তার মতো অনেককেই কাঁদাচ্ছে।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজিব উদ্দিন বললেন, ‘এটা খুবই মর্মান্তিক দৃশ্য। কয়েক মিনিট আগেই যে ছেলেটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন শরীর দেখে সহ্য করতে পারিছলাম না। পুরো শরীর আমার কাঁপছিল। নিজেকে সামলাতেই পারছিলাম না।’
রাজিব বলেন, ‘রাতে যখন ঘটনা ঘটে, তখন পুরো এলাকাটা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। পাথরবোঝাই ট্রাকটি ঘুরিয়ে ভেতরে নেয়া হচ্ছিল। এ সময় মোটরসাইকেল থামিয়ে দেয় হিমেল। ট্রাকটি ভেতরে যাওয়া র পথেই এর বাম্পারে আটকে যায় বাইক। হেঁচকা টানে ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে যান হিমেল। পাশে পড়ে যাওয়া আরেক ছাত্র রায়হানের পা চাপা পড়ে ট্রাকের নিচে। হিমেল সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান। আর রায়হানকে নেয়া হয় হাসপাতালে।’
দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হিমেলের চলে যাওয়া কষ্টের। খুবই কষ্টের। এখন আমরা যাকেই দায়ী করি না কেন, এর শোধ হবে না। তবে এই ঘটনা অনেকগুলো ব্যর্থতার ফল।’