পর পর চার কর্মদিবসে সূচকের টানা পতনে নতুন করে সংশোধনের যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেটি টানা দুই দিনের উত্থানে আপাতত কমেছে।
মঙ্গলবার ৭১ দশমিক ৩১ পয়েন্টের পর বুধবার সূচক বেড়েছে আরও ১৯ দশমিক ১৫ পয়েন্ট। তবে এর আগের দুই দিনে সূচক কমেছিল ১০১ পয়েন্টের মতো।
পুঁজিবাজারে সূচকের উঠানামার মধ্যে একটি বিষয় দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো কোনো একক খাত চাঙা হচ্ছে না। একেক দিন একেক খাতের শেয়ারদর বাড়ছে, লেনদেনেও আগ্রহ একেকদিন একেক খাতে বেশি দেখা যাচ্ছে।
আগের দিন জীবন বিমা খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লেও দর হারিয়েছিল সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। বুধবার জীবনবিমা খাতের ৮৫ শতাংশের পাশাপাশি সাধারণ বিমার ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে চাঙা ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যার ৮৩ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে। প্রকৌশল খাতে বেড়েছে ৬২ শতাংশ কোম্পানির দর।
তবে অর্থবছর শেষ করে লভ্যাংশের প্রস্তুতি থাকা ব্যাংক ও আর্থিক খাত এখনও ঘুমিয়ে। ব্যাংক খাতের ৩৪ শতাংশ ও আর্থিক খাতের ৪৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
লেনদেনের শুরুতে সূচক বেড়েছিল আরও বেশি। ৬ হাজার ৯৯৬ পয়েন্টের সূচক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে উঠে আছে ৭ হাজার ২৮ পয়েন্টে। সেখান থেকে আবারও উত্থান। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার আগ্রহে ১০ টা ৪৮ মিনিটে সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬১ পয়েন্ট বাড়ে। তখন প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৭ হাজার ৫৭ পয়েন্টে।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
সূচকের এমন উত্থান বেলা ১১ টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত। তারপর থেকেই মূলত মুনাফা উত্তোলনের চাপ পড়ে প্রধান সূচক ডিএইএক্সে। লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত সূচকের উত্থান অব্যাহত থাকলেও কমে আসে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার আগ্রহ।
দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় ১৯ পয়েন্ট বেড়ে সূচক দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৬ পয়েন্টে। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সূচকের পতনের টানা ১২ দিন সাত হাজারে থাকা সূচক ৬ হাজারে নেমে আসে। এরপর টানা তিনদিন ছয় হাজার সূচকে অবস্থান করে বুধবার আবারও সাত হাজারে স্থির হলো ডিএসইএক্স।
সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে। বুধবার ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। একদিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৮৬ কোটি টাকা।
এদিন ২০৪টি কোম্পনি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে। কমেছে ১২৬টির। দর পাল্টায়নি ৫১টির।
যেসব কোম্পানির দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে
বুধবার সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল টেলিকম খাতের রবির। কোম্পানির শেয়ার দর ১.৫৭ শতাংশ দর বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৬.৪৩ পয়েন্ট। স্কয়ার ফার্মার শেয়ার দর ১.১৬ শতাংশ শেয়ার দর বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৪.২৭ পয়েন্ট।
Caption
এছাড়া ব্র্যাক ব্রাংকের শেয়ার দর ১.৪৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২.২৮ পয়েন্ট। ফরচুর সুজ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, গ্রামীণফোনের শেয়ার দর বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৫.৬৭ পয়েন্ট।
সূচকের বৃদ্ধিতে আরও অবদান ছিল বেক্সিমকো সুকুক, যার ইউনিট প্রতি দর ২.৩০ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১.২৩ পয়েন্ট।
ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার, রিং শাইন ও সামিট এলায়েন্স পোর্টের শেয়ার দর বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২.৫৮ পয়েন্ট।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২২.৯১ পয়েন্ট।
এদিন যেসব কোম্পনির শেয়ারের দর পতন সূচকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেছিল তার মধ্যে আছে ওয়ালটন, আইসিবি, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, আর এ কে সিরামিকস, ডেল্টা লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ, ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, বসুন্ধরা পেপার মিলস ও বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি।
দর বৃদ্ধির ১০ কোম্পানি
বুধবার লেনদেনে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ। দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির ৭২ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ৭৯ টাকা ২০ পয়সায়।
নতুন তালিকাভুক্ত বিডি থাই ফুডের শেয়ার বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এ ছাড়া নতুন তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরও বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এই ১০টি কোম্পানি সূচক টেনে ধরার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে
বেঙ্গল উইসডমের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। নয় শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে আরও দুটি কোম্পানির। এগুলো হচ্ছে অলেম্পিক এক্সেসরিজ ও ইয়াকিন পলিমার।
সাত শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির। এগুলো হচ্ছে রিং সাইন, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও একমি পেস্টিসাইড।
ছয় শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে ৫টি কোম্পানির। এর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে আছে একটি। অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিসের শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ।
দর পতনের ১০ কোম্পানি
৫ দশমিক ০৯ শতাংশ শেয়ার দর পতন হয়েছে শমরিতা হসপিটালের। দিনের সবচেয়ে বেশি দর হারানোর তালিকার শীর্ষে ছিল এটি।
এ ছাড়া ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ দর হারিয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল। মতিন স্পিনিংয়ের শেয়ার দর হারিয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এ ছাড়া তিন শতাংশের বেশি শেয়ার দর হারিয়েছে বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, আরএকে সিরামিক, বসুন্ধরা পেপার, ডেল্টা লাইফ, অগ্নি সিস্টেমস।
এসিআই ফরমুলেশন ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, ন্যাশনাল লাইফের ৩ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
দুই শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমেছে ২০টি কোম্পানির। এর মধ্যে লাভেলো আইসক্রিমের ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
লেনদেনে সেরা ১০
বুধবার সবচেয়ে বেশি টাকার অংকে শেয়ার লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের ৯৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৯০টি।
খাতওয়ারি লেনদেনের পরিসংখ্যান
এ ছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৪২ লাখ ২৮ হাজার ২৩৩টি।
ফরচুন সুজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। ওরিয়ন ফার্মার ৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকার।
বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭০৫টি। আরএকে সিরামিকের ২৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ন্যাশনাল পলিমারের ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, লাফার্জ হোলসিমের ২৬ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সদ্য তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনিয়ন ব্যাংকের এদিন ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। হাতবদল হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ ৯০ হাজার ২২৩টি।
এ ছাড়া কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ৬১ লাখ ৫ হাজার ৬৩৭টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।