বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কাছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চিঠি দেয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে দলটির ‘লবিস্ট নিয়োগ’কে রাষ্ট্রদ্রোহ বলছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এই কাজগুলো খতিয়ে দেখতে সরকারি নানা সংস্থা কাজ শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সাহায্য বন্ধ করার অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে দেয়া বিএনপি মহাসচিবের চিঠি ও লবিস্ট নিয়োগ সংক্রান্তে বিভিন্ন নথি তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের লেখা দুটি চিঠি পড়েও শোনান মন্ত্রী। এর একটি লেখা হয়েছে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল, অপরটি ২৪ এপ্রিল।
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের’ রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন হাছান। বলেন, ‘আসলে যারা এভাবে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশকে বিব্রত করার জন্য এবং রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য, তাদের আসলে বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত নয়।’
পাশাপাশি বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে দলটির নেতারা যে চুক্তি করেছেন তার নথিও তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী।
এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কী- এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে তারা (বিএনপি) যে কাজগুলো করেছে এবং করছে এগুলো রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কাজ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যেগুলো এ বিষয়ে ইনভেস্টিগেট করে তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।’
লবিস্ট নিয়োগে ব্যয় করা অর্থের হিসাব নির্বাচন কমিশনে না দেয়ায় বিএনপির নিবন্ধন নিয়ে সমস্যা হতে পারে কি না- এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে তাদের খরচের হিসাব দিতে হয়। এখানে যে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার জন্য, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের জন্য, তারা এই হিসাব নির্বাচন কমিশনে দিয়েছে কি না।
‘সেটি নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবে। নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের’ রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন হাছান। বলেন, ‘আসলে যারা এভাবে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশকে বিব্রত করার জন্য এবং রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য, তাদের আসলে বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত নয়।’
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলছেই
বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা পরস্পরকে ঘায়েল করতে নানা কথা বলছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাতীয় সংসদে প্রথমে এই বিষয়টি তুলে ধরেন। জানান, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। লবিস্টের ফি পরিশোধে বিএনপি কোন প্রক্রিয়ায় টাকা পাঠাল, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদককে অনুরোধ করেন তথ্যমন্ত্রী।
বিএনপি অবশ্য পরে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাধ্যমে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। তখন যে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, তার উৎস কী, সেই প্রশ্ন তুলেছে তারা।
তার (ফখরুল) কথার সারমর্ম হচ্ছে বাংলাদেশকে সাহায্য বন্ধ করা। উনি গতকাল বলেছেন, তিনি সাহায্যের কোনো কথা বলেননি। এখানে সাহায্য পুনর্মূল্যায়ন ও প্রকারান্তরে সাহায্য বন্ধের আহ্বান তিনি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব এই নথিগুলো কীভাবে অস্বীকার করবেন?
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা নয়, এক প্রবাসী বাংলাদেশি এই লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। তার দায় দায়িত্ব বিএনপির নয়।
তবে সেই প্রবাসীর উদ্যোগে বিএনপির সমর্থন আছে বলেও জানান ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে বিদেশিদের কাছে চিঠি দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিদেশে লেখা আমার ওই চিঠিসমূহ কোনো লবিস্ট নিয়োগের বিষয় নয়, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহ্বান মাত্র।’
তিনি বলেন, ‘আর তাই, বিএনপি তার আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবেই দেশের উন্নয়ন অংশীদারদের সমর্থন চায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সংগ্রামে দেশি-বিদেশি সব অংশীদারদের এই সরকারের সকল অপকর্ম সম্পর্কে অবগত করে রাখতে চায়।’
‘ফখরুলের বক্তব্য আত্মরক্ষার চেষ্টা’
সরকার জনগণের করের টাকায় লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে মির্জা ফখরুলের অভিযোগেরও জবাব দেন হাছান মাহমুদ। বলেন, ‘পৃথিবীর প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশ রপ্তানি বাড়ানোর জন্য, দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য এবং পর্যটনের বিকাশের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে। বাংলাদেশ সরকারও পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য বিদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে, ভাবমূর্তি আগের তুলনায় আরও ভালো হয়েছে।’
বিদেশিদের কাছে ফখরুলের দেয়া চিঠি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি যে চিঠি লিখেছেন বিদেশিদের কাছে এটি স্বীকার করেছেন। তিনি যেটা অস্বীকার করেছেন সেটা হচ্ছে সাহায্য বন্ধের কথা লেখা।
‘তার কথার সারমর্ম হচ্ছে বাংলাদেশকে সাহায্য বন্ধ করা। উনি গতকাল বলেছেন, তিনি সাহায্যের কোনো কথা বলেননি। এখানে সাহায্য পুনর্মূল্যায়ন ও প্রকারান্তরে সাহায্য বন্ধের আহ্বান তিনি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব এই নথিগুলো কীভাবে অস্বীকার করবেন?’
‘দে আর লায়ার্স’
বিএনপি নেতারা মিথ্যাবাদী- এমন অভিযোগও করেন হাছান। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা যে প্রচণ্ড মিথ্যাচার করেন, এটির প্রমান হলো এই নথিগুলো। দে আর অল লায়ার্স।
‘তারা দেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করছে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ এই নথিগুলো। শুধু তা নয়, তারা দেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করছে। তারা যে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে মিথ্যাচার করেছে ক্রমাগতভাবে, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় সেটিও প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ তাদের পুরো রাজনীতিটাই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত।’
খালেদা জিয়ার বাড়ি ফেরায় বিএনপি খুশি হয়নি বলেও মনে করেন তথ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আসলে বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়াতে বিএনপি প্রচণ্ডভাবে আহত হয়েছে। বিএনপি প্রচণ্ডভাবে হতাশ। ডাক্তাররা কেন তাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে দিলেন।’
‘মিথ্যাচারের জন্যই মহাসচিব ফখরুল’
হাছান বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বেশি করে মিথ্যাচার করতে পারেন বলেই সম্ভবত তাকে মহাসচিবের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। উনি একটাই ভালো করে পারেন, সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলতে পারেন।
‘জলজ্বলন্ত প্রমাণ থাকার পরেও কীভাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি মিথ্যাচার করেছেন সে প্রশ্ন আমার। পুরো জাতি যখন তাদের ধিক্কার দিচ্ছে, সিভিল সোসাইটি যারা সরকারে সমালোচনা করেন তারাও যখন সমালোচনায় মুখর, তখন তিনি আত্মরক্ষার্থে সংবাদ সম্মেলন করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেটি করা যাচ্ছে না।’