যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করেছেন নিপুন বিশ্বাস। সব অনিশ্চয়তা শেষে তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে অতিরিক্ত আসনে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিপুন ভর্তির সব কাজ শেষ করেন।
ভর্তি শেষে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন প্রথম শুনলাম আমি ভর্তি হতে পারব না তখন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। এখন ভর্তি হতে পেরেছি। সবার কাছে আশীর্বাদ চাচ্ছি, আমার স্বপ্ন যেন পূরণ হয়।’
নিপুনের বাড়ি নীলফামারী সদরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে। তবে নিপুন সেখানে পৌঁছান দুপুর ১২টার কিছু পরে।
এ কারণে মেধাতালিকার শীর্ষে থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী তাকে ভর্তি নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ করে।
এরপরই মঙ্গলবার জরুরি সভা ডেকে উপাচার্য আনোয়ার হোসেন জানান, মানবিক দিক বিবেচনায় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে একটি আসন বাড়িয়ে নিপুনকে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উপাচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যবিপ্রবি সব সময় শিক্ষার্থীদের প্রতি সহনুভূতিশীল। আমাদের শিক্ষার্থীসহ যারা এ ঘটনা প্রশাসনের নজরে আনতে সহায়তা করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
যা ঘটেছিল
নিপুন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের শরীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির তালিকায় তার নাম ছিল শীর্ষে।
৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়, ৩১ জানুয়ারি সকালে ওই বিভাগে ভর্তি কার্যক্রম হবে। সে জন্য তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের সোমবার সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে।
নিপুন জানান, তার স্মার্টফোন নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট চেক করতে পারেননি। তিনি আশা করেছিলেন ভর্তির নোটিশ তার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে কিংবা ফোন করে জানাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও জানান, রোববার মধ্যরাতে পরিচিত একজন ফোন করে তাকে নোটিশের বিষয়টি জানান। এরপর পরিচিতজনদের কাছ থেকে তিনি ২৩ হাজার টাকা ধার করেন। এর মধ্যে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। সোমবার সকালে সেই গাড়িতে করে তিনি যশোরের উদ্দেশে রওনা দেন।
দূরত্ব ও রাস্তা খারাপ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে তার দেরি হয়ে যায়। ভর্তির সময় ১১টায় শেষ হলেও তিনি পৌঁছান ১২টা ৮ মিনিটে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তার দেরি হওয়ায় তালিকায় অপেক্ষায় থাকা একজনকে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন তানভীর ইসলাম জানান, ওইদিন তিন বিভাগসহ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির কাজ ছিল। এ কারণে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তির জন্য সময় বাড়িয়ে দুপুর ১২টা করা হয়। এর মধ্যেও নিপুন উপস্থিত হতে পারেননি। তবে তালিকায় অপেক্ষায় থাকা এক শিক্ষার্থী সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। এ কারণে তাকেই ভর্তি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মেসেজ বা কল দেয়ার কথা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি জানান এটা টেকনিক্যাল কমিটির বিষয়।
টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ গালিব বলেন, ‘মেসেজ দেয়া বাধ্যতামূলক নয়। শিক্ষার্থীকে জানানোর জন্য ওয়েবসাইটে নোটিশ দেয়া হয় কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে মেসেজ দেই। অনেক সময় নানা কারণে মেসেজ পৌঁছাতে দেরি হতে পারে। সময় অনুযায়ী না আসতে পারা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’