বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুন্সিগঞ্জের গ্রামে দল বেঁধেছে জারবেরা

  •    
  • ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৪১

মুন্সিগঞ্জের এক অখ্যাত গ্রামে দলে দলে ফুটেছে জারবেরা। শুধু সৌন্দর্য নয়, বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের অপার সম্ভাবনা ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় কৃষকদের।

গোলাপের মতো এত প্রেমময় নয়, টিউলিপের মতো যত্নও চায় না সে। কার্নেশন ফুলের মতো শত পাপড়ির ছড়াছড়িও নেই তার। তবু সৌন্দর্যের রঙিন সরলতা দেখে যে কারো চোখ আটকে যায় ফুটন্ত জারবেরায়।

এমন অনুভূতি পাওয়া গেল মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পুরাপাড়া গ্রামে। এ গ্রামেই একখণ্ড জমিতে ফুটেছে শত শত জারবেরা। ফোটার অপেক্ষায় আছে আরও সহস্র।

প্রথমে শখের বসে এই ফুলের চাষ করেছিলেন পুরাপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হক হিরু। দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন তিনি। দেশে ফিরে আফ্রিকার ডেইজি খ্যাত জারবেরা ফুলের প্রেমে পড়েছেন।

শুধু কি প্রেম! জারবেরা চাষ করে বাণিজ্যিক সফলতাও পেয়েছেন হিরু। কারণ বাজারে এই ফুলের বিপুল চাহিদা।

হিরুর মতে, অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভজনক এ ফুলের আবাদ। জমি থেকে ফুল তুলে প্রতিদিনই বাজারে পাঠাচ্ছেন তিনি।

অসংখ্য রঙের জারবেরার মধ্যে হিরুর জামিতে ফুটছে লাল ও গোলাপি রঙের ফুল। শীতের মৌসুমেও তার জমিটিতে জারবেরা ফুলের সমারোহ।

২ লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ২০ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করলেও এখন ৪০ শতাংশ জমিতে জারবেরা চাষ করছেন হিরু। প্রায় ১০ হাজার চারাগাছে ফুটছে ফুল। প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার ফুল বিক্রির জন্য তোলা হয়।

রাজধানী ঢাকাসহ স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে পাইকারিতে প্রতিটি ফুল বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ টাকা দরে। খুচরা বাজারে যা আরও বেশি। এতে প্রতি মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয়ও করছেন হিরু। তাই তাকে দেখে অনেকেই এখন জারবেরা চাষে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। জারবেরা ফুল ও এর চাষ দেখতে পুরাপাড়া গ্রামে এখন ছুটে আসছেন অনেকেই।

কৃষি বিভাগ বলছে, সঠিকভাবে চাষাবাদ করলে এই ফুল হতে পারে স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানের নতুন মাধ্যম।

ফুলচাষি মোজাম্মেল হক হিরু বলেন, ‘প্রথমে আমি ১২০ শতাংশ জমিতে শখের বশে জারবেরা চাষ শুরু করি। কিন্তু বর্ষার পানিতে জমি তলিয়ে জারবেরার ক্ষতি হয় সেবার। পরে করোনাভাইরাসের কারণেও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হই। বর্তমানে লাভের মুখ দেখছি। সব খরচ বাদে বছরে ২-৩ লাখ টাকা এখন আয় করছি।’

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ জমিতে ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রতিটি চারা কিনতে হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। একটি চারা চার থেকে পাঁচ বছর বাঁচে এবং ফুল দেয়। তবে দুই বছর পর্যন্ত ভালো উৎপাদন আশা করা যায়।

হিরুর মতে, জারবেরা ফুল উৎপাদনে প্রথম বছরই সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। পরের খরচগুলো মূলত গাছের পরিচর্যা ও কীটনাশকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজের এলাকায় আলু চাষ করে যারা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের জারবেরা ফুল চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন হিরু।

স্থানীয় চাষী জালাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি বছরই আলু আর সবজি আবাদ করে ক্ষতি হয়। কিন্তু এই জারবেরা একবার চাষ করলে দুই বছর পর্যন্ত ফুল বিক্রি করে টাকা আয় করা সম্ভব। আমিও এই ফুল আবাদের পরিকল্পনা করছি।’

জারবেরার সৌন্দর্যের কথা বর্ণনা করে ভবিষ্যতে এই ফুল চাষের আগ্রহ দেখিয়েছেন স্থানীয় চাষী রহিম মোল্লাও।

স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশেই ফুলবাগান। এখান থেকে অনেকেই ফুল কিনে নিয়ে যায়। ফুলের ব্যবসা দেখে ভালো লাগে।’

হিরুর জারবেরা ক্ষেতে মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, ‘এই ফুলগাছের বড় শত্রু পোকামাকড়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে গাছে ফুল আসে। প্রতিদিনই এখন হাজারের বেশি ফুল উৎপাদন হয়। পুরো ৪০ শতাংশ জায়গায় ফুল ফোটা শুরু হলে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজারের ওপর ফুল উৎপাদন হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খুরশীদ আলম জানান, জারবেরা ফুলের বীজ থেকে চারা হয় না। সাকার উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে। চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। গাছে এক মাসের বেশি ও গাছ থেকে তোলার পর ৮ থেকে ১৫ দিন এই ফুল সতেজ থাকে।

এ বিভাগের আরো খবর