বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমদানির জোয়ারে বাণিজ্য ঘাটতি চূড়ায়

  •    
  • ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২১:৩৩

ছয় মাসে ১৫.৬২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। এর আগে কখনোই ছয় মাসে এত বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি যা বাড়ছে, তা যদি ঠিকঠাকমতো বিনিয়োগে আসে, তাহলে অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান বা বাণিজ্য ঘাটতি চূড়ায় উঠছে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৬০ লাখ (১৫.৬২ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি।

এর আগে কখনোই ছয় মাসে এত বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি বাংলাদেশ।

২০২০-২১ অর্থবছরের এই ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৮৭ কোটি (৬.৮৭ বিলিয়ন) ডলার।

অন্যদিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১৮ কোটি ৩০ লাখ (৮.১৮ বিলিয়ন) ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৫১ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

গত বছরের অক্টোবর থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিতে জোয়ার বইতে শুরু করে। এখনও সেটা অব্যাহত রয়েছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। কিন্তু আগের মতো লকডাউন বা সবকিছু একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়নি। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। আর এতেই বাড়ছে পণ্য আমদানি; বাড়ছে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ।

২০২০-২১ অর্থবছরের এই ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৮৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৩ হাজার ৮৯৭ কোটি ১০ লাখ (প্রায় ৩৯ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই ছয় মাসে ২ হাজার ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।

অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৫০ লাখ (২৩.৩৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবেই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত অর্থবছরের চেয়ে অনেক বেশি বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হবে বলে মনে করছেন গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘একটা স্বস্তির জায়গা হচ্ছে, আমদানির সঙ্গে রপ্তানিও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। রপ্তানির এই ইতিবাচক ধারা বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। তাই, আমদানি যেটা বাড়ছে, তা যদি ঠিকঠাকমতো বিনিয়োগে আসে, তাহলে অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।

‘আশার কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আগামী বছর থেকেই যান চলাচল করবে। মেট্রোরেলও পুরোদমে চালু হবে। কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজও শেষ হবে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষ হয়েছে। আরও কয়েকটির কাজ চলছে। এসব বড় প্রকল্প বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।

‘আর এসব উন্নয়নযজ্ঞকে কেন্দ্র করেই বিনিয়োগের ছক কষছেন উদ্যোক্তারা। সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পণ্য সরঞ্জাম আমদানি করছেন তারা। তাতেই বাড়ছে আমদানি।’

সেবা বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়ছে

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১০৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১ হাজার ২৩ কোটি ৮০ লাখ (১০.২৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ কম।

২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ১২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

লেনদেন ভারসাম্যেও বড় ঘাটতি

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩৫১ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শুরুই হয়েছিল লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে। প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

ডিসেম্বর শেষে তা আরও বেড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

৯২৭ কোটি ৪০ লাখ (৯.২৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের বছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

তবে আর্থিক হিসাবে এখনও উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এই উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৬৬৭ কোটি ৬০ লাখ (৬.৬৭ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থবছরের এই সময়ে ২২১ কোটি ৯০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণসহায়তা পাওয়ায় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে বলে জানান আহসান মনসুর।

তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দাতাদের কাছ থেকে ৪০২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরের এই ছয় মাসে ১৯৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

সামগ্রিক লেনেদেনে ঘাটতি ১.৮ বিলিয়ন ডলার

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৯ কোটি ১০ লাখ (১.৮ বিলিয়ন) ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৬১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

এ বিভাগের আরো খবর