ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহ করা প্রার্থীরা আগের ধাপগুলোর তুলনায় কম এলাকায় জিততে পেরেছেন।
সোমবার দেশে যে ২১৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়, তার মধ্যে আগের ধাপগুলোর মতোই সবচেয়ে বেশি ১১৭টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা।
নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়াই করা ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী নেতারা জয় পেয়েছেন ৩৬টি ইউনিয়নে।
বিএনপি সমর্থক বা দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে জিতেছেন ২৯টি ইউনিয়নে।
১৭টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন এমন প্রার্থীরা যারা কোনো দলীয় রাজনীতিতে জড়িত নন। ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী না দিয়ে ভোট উন্মুক্ত করে দেয়, এর প্রতিটিতেই জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের অনুসারীরা।
বাকি চারটি ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির তিন নেতা ও জাতীয় পার্টির (জেপি) এক নেতা জয় পেয়েছেন।
জাতীয় নির্বাচনের দুই বছরের মতো সময় বাকি থাকতে তৃণমূলের এই নির্বাচন মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে শৃঙ্খলার অভাবের বিষয়টি তুলে ধরেছে। কেন্দ্র থেকে অনুরোধ ও বহিষ্কারের হুমকি উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক নেতা নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। কয়েক শ এলাকায় দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে জিতেছেন বিদ্রোহীরা, কোথাও কোথাও নৌকাও তারা ডুবিয়েছেন, ডুবেছেন নিজেরাও, ভোট ভাগাভাগির সুযোগে জিতেছেন আওয়ামী লীগবিরোধী অন্যরা।
নিউজবাংলা চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করেছে। এতে দেখা যায়, ২৮ নভেম্বর ৪৩৯টি ইউনিয়নে জয় পান নৌকা মার্কা নিয়ে লড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৭টি ইউনিয়নে জয় পান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা।
এই ধাপে বিএনপির স্থানীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্র্রতীকে লড়াই করে জয় পান অন্তত ৯৬টি ইউনিয়নে।
পঞ্চম ধাপে ৫ জানুয়ারি যেসব ইউনিয়নে ভোট হয়, সেখানে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পান ৩০৮টি ইউনিয়নে। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সেদিন জয় পান ১৯০টি ইউনিয়নে। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সেদিন জয় পান ৯৮টি ইউনিয়নে।
এটা ঠিক চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের তুলনায় ষষ্ঠ ধাপে কমসংখ্যক ইউনিয়নে ভোট হয়েছে, তাই বিদ্রোহী ও বিএনপির স্থানীয় নেতাদের জয়ের সংখ্যাটিও কম এলাকায় হয়েছে। তবে আগের দুই ধাপে নৌকার তুলনায় বিদ্রোহী ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যে অনুপাতে জয় পেয়েছেন, ষষ্ঠ ধাপে সেটা হয়নি।
এর মধ্যে পঞ্চম ধাপে বিদ্রোহী ও বিএনপির স্বতন্ত্র মিলিয়ে নৌকার জয় পাওয়া প্রার্থীকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যেটা ষষ্ঠ ধাপে হয়নি।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন থেকে আগের দিনের ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায়, নৌকা জয় পেয়েছে ৫৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ ইউনিয়নে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৯৫টি বা ৪৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ ইউনিয়নে।
২১৮ ইউনিয়নে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও ২টিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
ষষ্ঠ ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৪৪ জন। এদের মধ্যে ১২ জন চেয়ারম্যান, যাদের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। সাধারণ সদস্য পদে ১০০ জনের জিততে ভোট লাগেনি তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না বলে। ৩২ জন সংরক্ষিত নারী সদস্যও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন।
এখন পর্যন্ত যে কয়টি ধাপে ভোট হয়েছে, তার মধ্যে ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনই হয়েছে শান্তিপূর্ণ। এর আগে প্রতিটি ধাপে প্রচার বা ভোটের দিন অথবা ভোট শেষে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। সংঘাত, সহিংসতায় আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
তবে সোমবার কোথাও বড় ধরনের কোনো গোলযোগ ছাড়াই শেষ হয়েছে ভোট। কেন্দ্রে কেন্দ্র ভোটারের উপস্থিতিও দেখা গেছে বেশি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে নেয়া ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পড়ে। যন্ত্রের ভোটে এর আগে কখনও এত বেশি ভোট পড়তে দেখা যায়নি।
এ ধাপের প্রার্থী ছিলেন ১১ হাজার ৬০৪ জন। যাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ১৯৯ জন। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রার্থী হিসেবে ছিলেন ২ হাজার ৫৫৯ জন সাধারণ সদস্য পদে সাত হাজার ৮৪৬ জন।
দেশে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১টি। এ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি ইউপিতে তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি।
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সপ্তম ধাপে এবং ১০ ফেব্রুয়ারি অষ্টম ধাপের ভোট হবে।