রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজার পথে রওনা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
গত ১৩ নভেম্বর তিনি হাসপাতালটিতে ভর্তি হন। ৮১ দিনের মাথায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে তিনি একটি গাড়িতে করে হাসপাতাল থেকে গুলশানের দিকে যাত্রা শুরু করেন।
এর আগে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা বোর্ডের পক্ষ থেকে তার স্বাস্থ্যের সবশেষ অবস্থা জানান চিকিৎসক ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী।
তিনি জানান, এই হাসপাতালে রোগী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী মিলিয়ে গত জানুয়ারি মাসেই ৩৮০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা এই হাসপাতালের চেয়ে বাসায় রেখে চিকিৎসা নেয়াটাই কম ঝুঁকির মনে করছেন।
সকালে বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের নেত্রীর বাসায় ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তাতে বলা ছিল, ‘আজ ১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাসায় আসবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে দুর্নীতির দুই মামলার দণ্ড স্থগিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বিএনপি নেত্রী ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান।
সে সময় দুটি শর্তের কথা বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এগুলো হলো, ১. বিএনপি নেত্রী চিকিৎসা নেবেন তার বাসায়, ২. তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
তবে গত এপ্রিলে বিএনপি নেত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম শর্তটি আর কার্যকর থাকেনি। তিনি চারবার এভারকেয়ারে যান এবং তিনবার সেখানে ভর্তি হন। তবে স্বজনদের আবেদন ও তার দলের নানা কর্মসূচিতেও সরকার তাকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি দেয়নি।
গত বছরের ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ হওয়ার চার দিন পর এভারকেয়ারে তার সিটি স্ক্যান করা হয়। তবে ভর্তি করা হয়নি। পরে ২৭ এপ্রিল একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিএনপি-প্রধানকে। ১৯ জুন তিনি বাসায় ফেরেন।
জ্বর আসার পর গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় তার বায়োপসি করার পর টিউমারের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সেটি অপারেশন করে বাদ দেয়া হয়। ৭ নভেম্বর তিনি বাসায় ফেরেন।
দ্বিতীয় দফায় ফেরার পর নিজ বাসভবন ফিরোজায় বেশি দিন থাকা হয়নি খালেদা জিয়ার। সেখানে ফেরার ৬ দিনের মাথায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বিকেলে আবার তাকে এভারকেয়ারে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় পরের দিন ভোরে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তার।
সে সময় বিএনপি নেত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের নেত্রীকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে আবেদন করা হয়। বিএনপিও এই দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, তাদের নেত্রীর জীবন সংকটাপন্ন। তার চিকিৎসকরা দাবি করেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস হয়েছে এবং এর চিকিৎসা দেশে নেই। দ্রুত বিদেশে পাঠানো না গেলে তার কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি নেত্রীকে দেখে এসে বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার বিদেশে না পাঠালে কিছু একটা হয়ে যাবে।