টানা চারদিনের সূচক পতনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ কাটল সূচকের বড় উত্থানে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনও।
চার দিনে ১০৬ পয়েন্ট হারিয়ে ফেলার পর মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৭১ দশমিক ৩১ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৩৯টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে ৯৫টির।
আগের দিন লেনদেন ছিল ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। সেটি বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। একদিনের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩৫ কোটি টাকা।
সূচকের উত্থানে ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ৯৯৭ পয়েন্টে। গত ৩০ জানুয়ারি তা ৭ হাজারের নিচে নেমে যাওয়ার আগে টানা ১২ কর্মদিবস সাত হাজারের বেশি ছিল সূচক।
গত বছরের শেষ প্রান্তিকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে দর সংশোধন শুরু হয়। সেটি চলে সাড়ে তিন মাস। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাজার। চলতি বছরের প্রথম মাসের টানা তিন সপ্তাহ চাঙাভাব থাকে। তবে গত চার দিন ধরে টানা দরপতন হলে নতুন করে শঙ্কা দেখা দেয়।
মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে সূচক বেড়ে গেলেও পরে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত কমতে থাকে। তবে এরপর থেকে টানা উত্থান দেখা দেয়ায় নতুন করে দর সংশোধনের চাপ কাটে বিনিয়োগকারীদের।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ভালো দিন গেছে বস্ত্র, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বিবিধ, আর্থিক, খাদ্যে।
লেনদেনে শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে জীবন বিমা খাতের। তবে সাধারণ বিমা খাতের ২৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। সেবা ও আবাসন, কাগজ ও প্রকাশনা, টেলিকম খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। সিমেন্ট খাতেও একটি ছাড়া বাকি সবগুলো কোম্পানির দর বেড়েছে।
লেনদেনে সবচেয়ে এগিয়ে প্রকৌশল খাত। বিবিধ, বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন এবং বিমা খাতেও আগ্রহ দেখা গেছে।
যেসব কোম্পানির উত্থানে সূচক বেড়েছে
সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ। কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য ২৫ শতাংশ নদগ লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করায় এই আগ্রহ জন্মেছে।
কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৬.১৮ শতাংশ। আর এতে সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ৯.১৬ পয়েন্ট।
সূচক সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে এই ১০টি কোম্পানি
টেলিকম খাতের রবির শেয়ার দর ২.১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সূচক বেড়েছে ৭.০৩ পয়েন্ট। স্কয়ার ফার্মার শেয়ার দর ২.০৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৬.৬৯ পয়েন্ট।
পাওয়ারগ্রিডের শেয়ার দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ৩.২৩ পয়েন্ট। এছাড়া ডেল্টা লাইফ, আর এ কে সিরামিকস, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, রেনাটা ও বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৬ পয়েন্ট।
সূচক বৃদ্ধিতে ডেসকোর অবদান ছিল ২.১৪ পয়েন্ট।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৪২ পয়েন্ট।
অন্যদিকে গ্রামীণফোনের শেয়ারদর ০.৩৭ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ২.৯৯ পয়েন্ট। লিনডেবিডি, ফরচুন সুজ, অলেম্পিকি ইন্ডাস্ট্রিজ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, বার্জার পেইন্টস, বিকন ফার্মা, সামিট পাওয়ার, আইসিবি ও এনভয় টেক্সটাইল সূচক কিছুটা কমিয়েছে।
এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে কিছুটা
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১০.৬৪ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির ১০ কোম্পানি
শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দর বৃদ্ধির কোনো সীমা ছিল না এদিন। এই সুযোগে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৯.০৭ শতাংশ।
কোম্পানিটি দীর্ঘ লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হয়ে মুনাফার তথ্য জানিয়েছে। লভ্যাংশের পাশাপাশি এই বিয়ষটিও শেয়ারদর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
তবে স্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিবেচনায় বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমসে শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ। ২৬ টাকা ২০ পয়সা দরের শেয়ার পৌছেছে ২৮ টাকা ৮০ পয়সায়। সহযোগী কোম্পানি বিবিএস ক্যাবলসের শেয়ার বিক্রির পর মুনাফায় ফেরার সংবাদ আসার পর চার কর্মদিবসে শেয়ারদর ২০ টাকা থেকে উঠে এলো এই পর্যায়ে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা খান ব্রাদাস পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ।
এদিন আরও পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে নয় শতাংশের বেশি। এর মধ্যে লোকসানি ইয়াকিন পলিমারের ৯.৮৮ শতাংশ, ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্কের ৯.৮৫ শতাংশ, নতুন তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৯.৭০ শতাংশ এবং বিডি থাই ফুডের ৯.৬৫ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
৮.১৩ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৯৩ শতাংশ।
দর পতনের ১০ কোম্পানি
মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর কমেছে এনভয় টেক্সটাইলের ৪.২১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ডেফোডিল কম্পিউটারের দর কমেছে ৩.৭৩ শতাংশ।
খাতওয়ারি লেনদেনের চিত্র
তিন শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমেছে আরও চারটি কোম্পানির। এর মধ্যে ফরচুন সুজের দর ৩.৩৯ শতাংশ, এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের দর ৩.১৫ শতাংশ, কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ৩.১০ শতাংশ কমেছে।
দরপতনের ষষ্ঠ স্থানে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দর ২.৯৭ শতাংশ, লিনডে বিডির দর ২.৭৬ শতাংশ, দুলামিয়া কটনের ২.৭৪ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
দর পতনের শীর্ষ তালিকায় আরও ছিল রহিম টেক্সটাইল, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও ন্যাশনাল টি কোম্পানি।
লেনদেনে সেরা ১০
মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের ৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার। হাতবদল হয়েছে ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩৭টি শেয়ার।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের ৯০ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১ কোটি ১২ লাখ ১৮ হাজার ৯৯২টি শেয়ার এদিন হাতবদল হয়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
এছাড়া বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমসে ৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মায় ৩৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।
আরএকে সিরামিকের ৩৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকার, ফারইস্ট লাইফের ২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকার, ন্যাশনাল পলিমারের ২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকার, বিডি ফাইন্যান্সে ২৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ২৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।