দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও জোরদার করার অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সোমবার দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান মজবুত বন্ধনের কথা তুলে ধরেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার ভোরে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্জনে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বস্ত অংশীদার। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে শান্তি, বহুত্ববাদ ও জনগণের মর্যাদার প্রতি অভিন্ন অঙ্গীকার।’
দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনকে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।
বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হতে চাই এবং আগামী দিনে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি আমাদের জনগণ ও অর্থনীতির সুবিধার জন্য সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে চাই।’
শেখ হাসিনা তার বার্তায় বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং তার নিজের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও সে দেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।
১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টিকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে এবং পরবর্তী দশকগুলোতে আর্থসামাজিক উন্নয়নে দেয়া অব্যাহত সহায়তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ, জনগণের ক্ষমতায়নে ও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে অনেকাংশে সফল হয়েছে।
‘আমরা একটি সমৃদ্ধ আধুনিক অর্থনীতি, দায়িত্বশীল, গণতন্ত্র চর্চাকারী, শান্তি গড়ে তোলা ও বজায় রাখতে সচেষ্ট দেশ হিসেবে এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা জোরদারের জন্য আমাদের অবস্থানকে সুসংহত করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সন্তোষজনক যে, আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আদান-প্রদান এবং শিক্ষা, কৃষি, জ্বালানি খাতে সম্পৃক্ততা ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলা, বিনিয়োগ ও পরিষেবা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন এবং জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুর মতো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থপূর্ণ অংশীদারি গড়ে তোলার পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার করার অপার সুযোগ রয়েছে।’
এ ছাড়া সোমবার সন্ধ্যায় হোটেল পূর্বাণীতে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুর কোভিডসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে নিজ নিজ সরকারের অঙ্গীকার তুলে ধরেন।
এসবের মধ্যে মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি-উদ্ভাবন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এ ছাড়া রয়েছে জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থপূর্ণ অংশীদারত্ব।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি ডাচ্-অস্ট্রেলিয়ান উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ডের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে লড়াই করেছিলেন ওডারল্যান্ড। তিনি বিদেশি নাগরিক হিসেবে বীরত্বপূর্ণ বীরপ্রতীক পদকে ভূষিত হন।
প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে ডক্টর জিওফ্রে ডেভিস, মিস্টার হার্বার্ট ফেইথ এবং মিস্টার অ্যান্থনি ক্লিফটনের মতো অস্ট্রেলিয়ানদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন।
শাহরিয়ার আলম ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় উন্নত বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গফ হুইটলামের বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন। যে সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী হুইটলাম শান্তি, বহুত্ববাদ এবং জনগণের মর্যাদার অংশীদারি প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দুই দেশের জনগণের মধ্যে একটি স্থায়ী বন্ধুত্ব রক্ষা করেছিলেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
প্রতিমন্ত্রী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানান এবং পরের দশকগুলোতে আর্থসামাজিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ দুই দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুবিধার পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রেলিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেন, অস্ট্রেলিয়া কোভিড-১৯ মহামারির চ্যালেঞ্জ থেকে অংশীদারি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে উন্মুখ।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমদ চৌধুরী, সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মহাপরিচালক (পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়) কাজী রাসেল পারভেজ এবং ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।