পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি লাফার্জহোলসিম ২০২১ সালে ৪ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে। এই অঙ্ক ২০২০ সালের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করার পর এতো বেশি মুনাফা আগে কখনই করেনি প্রতিষ্ঠানটি। আর এ কারণে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা হারে পরিশোধের ফলে মোট ২৯০ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করবে কোম্পানিটি।
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার এই রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা অর্জনে অবদান রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে নিট বিক্রি ২৭ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা হয়েছে। ২০২০ সালে বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬২২ কোটি ২০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ৩৫০ কিলোটন অ্যাগ্রিগেটস বিক্রি করেছে কোম্পানি। লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের একমাত্র কোম্পানি হিসেবে স্থানীয়ভাবে উচ্চ গুণগতমানসম্পন্ন অ্যাগ্রিগেটস উৎপাদন করছে।
গত বছর আগের বছরের তুলনায় করপরবর্তী মুনাফা ৬৪ শতাংশ বেড়ে ৩৮৮ কোটি ২০ লাখ টাকা হয়েছে। ২০২০ সালে এই মুনাফার পরিমান ছিল ২৩৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রাজেশ সুরানা বলেন, ‘২০২১ সাল আমাদের সকলের জন্যই একটি কঠিন সময় ছিল, কেননা এই সময়টাতে আমরা অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। তা সত্ত্বেও রেকর্ড পরিমান বিক্রি ও নিট মুনাফা ঘোষণা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। কঠিন সময়ে কোম্পানির সকল কর্মীদের সমবেত প্রচেষ্টার কারনেই এই ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উদ্ভাবনী ও টেকসই সমাধানে দেশে নেতৃস্থান অর্জনে আমাদের কোম্পানির কর্মীদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০২১ সালে আমরা নতুন দুটি গ্রীন ও বিশেষায়িত সিমেন্ট - ‘ওয়াটার প্রোটেক্ট’ ও ‘শক্তি’বাজারে এনেছি; উভয় পণ্যই বাজারে গ্রাহকদের মাঝে ভালো সাড়া ফেলেছে। কোম্পানির ডিজিটাল উদ্যোগ ‘স্বজন’ও ‘ই-কমার্স প্লাটফর্ম’নতুন মাইলফলক অতিক্রম করেছে।’
‘২০২১ সালে আমাদের টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ‘জিওসাইকেল’এর মাধ্যমে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে অধিকতর মনোনিবেশ করেছি এবং অ্যাগ্রিগেটস ব্যবসা শুরু করেছি। আমাদের ‘জিওসাইকেল’ প্রকল্পে অটোমেটেড ফিডিং সিস্টেম যোগ হয়েছে; যার মাধ্যমে এখন আমরা বছরে ৫০ হাজার টন বর্জ্য টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনা করতে পারছি এবং এটা এখন দেশের অন্যতম গ্রহনযোগ্য ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। যার মাধ্যমে দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
‘অ্যাগ্রিগেটস উৎপাদনে আমাদের বিনিয়োগ স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে এবং দেশের বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
সুরানা বলেন, ‘২০২২ সালে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমাদের সামগ্রিক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে এবং নির্মাণখাতে আমাদের পণ্য পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে মৌলিক সেবা প্রদানকারী হিসেবে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
‘নতুন বিপনন চ্যানেল ও পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরনে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। এর মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের দোরগড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। ‘স্বজন’আমাদের নতুন ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল; যার মাধ্যমে ডিজিটাল অ্যাপের সাহায্যে নতুন নতুন বাজারে পণ্য পৌঁছে দিতে পারছি।’
২০২১ সালের শেষ ভাগে আমরা দেশের প্রথম র্যাপিড আলিং স্ট্রেংথ সিমেন্ট ‘হোলসিম শক্তি’বাজারে এনেছি। এই সিমন্ট দেশের নির্মাণ খাতে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম, কেননা এই সিমেন্ট ব্যবহারে নির্মাণ ব্যায় ও সময় যেমন কমবে তেমনি বৃহৎ আকারের প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।’
‘বাংলাদেশের বাজারে নিজেদের অন্যদের থেকে আলাদা করতে লাফার্জহোলসিম সবসময়ই উদ্ভাবনে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় বাজারের জন্য ‘হোলসিম ওয়াটার প্রোটেক্ট’নামে পানি প্রতিরোধী সিমেন্ট বাজারে আনা হয়েছে। এই সিমেন্ট ব্যবহারে গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের ড্যাম্পপ্রুফ সিমেন্টের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছি আমরা,’ বলেন প্রধান নির্বাহী রাজেশ সুরানা।
লভ্যাংশ
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে দারুন আর্থিক ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, তাই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা হারে পরিশোধের ফলে মোট ২৯০ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরন করবে কোম্পানিটি।
আউটলুক
যদিও করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ঘিরে সবার মাঝেই অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, তথাপি কোম্পানি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধারা এবং ইতিবাচক অর্থনৈতিক নীতির কারনে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলোর সাথে রপ্তানি বৃদ্ধি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেশের ব্যবসা খাতে চাহিদা তৈরি করবে। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি দেশের উৎপাদন খাতকে প্রভাবিত করতে পারে। দেশব্যাপী সরকারের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলেও সিমেন্টের চাহিদা তৈরি হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
লাফার্জহোলসিম দেশের নেতৃস্থানীয় সিমেন্ট উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান। প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কোম্পানিটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিমেন্ট কারখানা ও তিনটি গ্রাইন্ডিং স্টেশন স্থাপনে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে; যা সিমেন্ট খাতে এ দেশে সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগ। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক হোলসিম গ্রুপ ও স্পেন ভিত্তিক সিমেন্টোস মলিন্স গ্রুপের যৌথ উদ্যোগ লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড।