বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লিয়াকত করেন গুলি, অনেক কষ্টে পাইছি বলে প্রদীপের লাথি

  •    
  • ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:৪৫

বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘মেজর সিনহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন ওসি প্রদীপ। সিনহার হাতে পিস্তল আছে ভেবে গুলি করেন লিয়াকত। ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে এসে সিনহার বুকের বাঁ পাশে লাথি মারেন। এতে মৃত্যু হয় সিনহার।’

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা কীভাবে হয়েছে, রায়ে সেটিও উল্লেখ করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল। তিনি জানান, সিনহাকে যখন গুলি করা হয় তখন তার দুই হাতই উঁচু করা ছিল।

সোমবার বিকেলে বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এতে দুই জনকে ফাঁসি ও ছয়জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

প্রধান দুই আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী পেয়েছেন প্রাণদণ্ড।

এই দুজন কীভাবে সিনহাকে হত্যা করেছেন, সেই বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন বিচারক।

সিনহার সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মেজর সিনহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন ওসি প্রদীপ। সিনহার হাতে পিস্তল আছে ভেবে গুলি করেন লিয়াকত।’

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

গুলি করার পর প্রদীপও ঘটনাস্থলে আসেন বলে উঠে এসেছে সাক্ষ্যে। বিচারক বলেন, ‘ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে এসে সিনহার বুকের বাঁ পাশে লাথি মারেন। এতে মৃত্যু হয় সিনহার।’

পুরো ঘটনাটিই পরিকল্পিত বলেও আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। বিচারক বলেন, ‘সিনহার হাতে পিস্তল আছে ভেবে লিয়াকত গুলি করার কথা স্বীকারও করেছেন।’

‘মেজর সিনহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন ওসি প্রদীপ। সিনহার হাতে পিস্তল আছে ভেবে গুলি করেন লিয়াকত।’

২০২০-এর জুলাইয়ে একটি ডকুমেন্টারির শুটিংয়ের জন্য তিন সহযোগীসহ কক্সবাজারের নীলিমা রিসোর্টে ওঠেন সিনহা। ডকুমেন্টারিটি ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য শুট করা হচ্ছিল।

গত ৩১ জুলাই সিনহা শামলাপুর পাহাড়ে যান। রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারে ফেরার পথে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে তাদের গাড়ি থামিয়ে সিনহাকে গুলি করা হয়।

এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে যে বক্তব্য দেয়া হয়, সেটি শুরু থেকেই বিশ্বাসযোগ্য হয়নি।

বিষয়টি আলোড়ন তোলার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সে সময় সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।

তবে ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের করা মামলায় যা উল্লেখ করা ছিল, বিচার চলাকালে সাক্ষ্য-প্রমাণেও অনেকটাই তেমনটা পাওয়া গেল।

মামলার বাদী এজাহারে লেখেন, ‘প্রদীপের সঙ্গে পরামর্শ করে লিয়াকত সিনহাকে গুলি করেন। এরপর প্রদীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে জুতা দিয়ে আঘাত করে সিনহার মুখ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা বিকৃত করার চেষ্টা করেন।’

পরিকল্পিত হত্যা

রায়ের পর্যবেক্ষণে বরখাস্ত এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের জবানবন্দির কথা উল্লেখ করে বিচারক বলেন, ‘লিয়াকত আগে থেকেই নন্দ দুলালকে (বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত এসআই) বলেন, সিনহাকে বহনকারী সিলভার কালারের গাড়ি থামাতে হবে।’

রায়ে বলা হয়, “চেকপোস্টে সিনহার দুই হাত উঁচু ছিল। ওই সময় লিয়াকত গুলি করেন। ঘটনাস্থলে প্রদীপ আসার পর সিনহার উদ্দেশে বলেন, ‘অনেক কষ্টের পরে তোরে পাইছি।' এই বলেই বুকে লাথি মারেন।”

নন্দ দুলাল বলেছেন, ওসি প্রদীপের ভয়ে জব্দ তালিকা তৈরি করেছেন। তিনি যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই তৈরি করেছেন জব্দ তালিকা।

বিচারক রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘আমি মেজর সিনহা হত্যা মামলার বিভিন্ন ইস্যু ও খুঁটিনাটি বিষয় খোঁজার চেষ্টা করেছি। এতে এপিবিএনের তিন সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। এই তিনজনই প্রথমে সিনহার গাড়িটি আটকানোর পর ছেড়ে দেন। পরে পুলিশ পুনরায় গাড়িটি আটকাল এবং ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে গুলি করা হয়।’

“চেকপোস্টে সিনহার দুই হাত উঁচু ছিল। ওই সময় লিয়াকত গুলি করেন। ঘটনাস্থলে প্রদীপ আসার পর সিনহার উদ্দেশে বলেন, ‘অনেক কষ্টের পরে তোরে পাইছি।' এই বলেই বুকে লাথি মারেন।”

বিচারক বলেন, ‘মূলত খোঁজার চেষ্টা করেছি, ঘটনাস্থল এপিবিএন চেকপোস্টে কেন এই ‍দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ড ঘটে। একটি প্রশ্নের উত্তর জবানবন্দি এবং আদালতে সাক্ষ্য-জেরা চলাকালেও বারবার খোঁজার চেষ্টা করেছি- এপিবিএন সদস্যরা স্যালুট দিয়ে চলে যেতে বলার পরও কেন আবার মেজর সিনহার গাড়ি থামানো হলো? কেনইবা গুলি করা হলো।

‘এপিবিএন সদস্যরা স্যালুট দিয়ে চলে যেতে বলার পরও কেন হত্যার ঘটনা থামাতে পারলেন না? তাদের দায়িত্ব ছিল চেকপোস্ট রক্ষা করা। হলে হয়তো এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না।’

এপিবিএন সদস্য এসআই শাহজাহান আদালতের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পাশেই একটা গাছের নিচে লিয়াকত দাঁড়িয়ে ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১০-২০ সেকেন্ডের মধ্যে গুলি করে দেয়।’

কেন লিয়াকত গুলি করেন, সেটি সাক্ষী ও আসামিদের সাক্ষ্য ও জবানবন্দিতে জানার চেষ্টা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন বিচারক।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত তিন স্থানীয় বাসিন্দার বরাতে বিচারক বলেন, ‘সিনহাকে দেখে ডাকাত বলে মাইকে ঘোষণা দিতে সহযোগিতা করেন এই তিন ব্যক্তি জন আয়াজ, নিজাম ও নুরুল আমিন। একই সঙ্গে সিনহার গাড়ির অবস্থান পুলিশের কাছে পাঠান তারা। তাতেই প্রমাণিত হয় এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

এ বিভাগের আরো খবর