বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিন্দুকে টাকা না পেয়ে বিস্মিত ইভ্যালি বোর্ড

  •    
  • ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৩১

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবেই (অববিয়াসলি) আশা করেছিলাম লকার ভেঙে মূল্যবান কিছু পাব। আমরা লকারে বেশকিছু ক্যাশ টাকা আশা করেছিলাম। কিন্তু সেটি তো হলো না।’

আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি লিমিটেডের লকারে টাকা না পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ইভ্যালির সংকট উত্তরণে গঠিত বোর্ড।

প্রতিষ্ঠানটির দুটি লকার ভেঙে এর বিস্তারিত জানাতে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

এ সময় বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবেই (অববিয়াসলি) আশা করেছিলাম লকার ভেঙে মূল্যবান কিছু পাব। আমরা লকারে বেশকিছু ক্যাশ টাকা আশা করেছিলাম। কিন্তু সেটি তো হলো না।

‘সিন্দুকে টাকা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। না হলে সিন্দুক কেন? দৈনন্দিন কাজ করার জন্য কত টাকা লাগে। সেগুলো কোথায়? এসব দেখে আমরা হতাশ।’

ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের কাছে লকারের পাসওয়ার্ড চেয়েও না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় উচ্চ আদালতের করে দেয়া অন্তর্বর্তীকালীন বোর্ড লকার ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বেলা ৩টার দিকে পুরো বোর্ডের সদস্য, ঢাকা জেলা বিভাগের মনোনীত ম্যাজিস্ট্রেট ও ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) উপস্থিতিতে ধানমন্ডিতে ইভ্যালি অফিসে থাকা দুটি লকার বৈদ্যুতিক চালিত কাটার দিয়ে ভাঙা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ইভ্যালির সংকট উত্তরণের বোর্ডপ্রধান বলেন, ‘দ্বিতীয় তলার লকার ভেঙে আমরা মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৯৭টি এবং সিটি ব্যাংকের দশটি চেক বই পেয়েছি। এছাড়া আরও কিছু কাগজপত্র পেয়েছি। নিচের তলার লকার ভেঙে আমরা ২৫৩০ টাকা পেয়েছি।’

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘এ ছাড়া মিলেছে ঢাকা ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের অসংখ্য চেক। এসব চেকে স্বাক্ষর রয়েছে ইভ্যালি বোর্ডের দায়িত্বশীলদের। এছাড়া পাওয়া গেছে ট্রেড গাইডলাইন বুক, ইভ্যালির খামে রাখা খালি ভাউচার সহ অপ্রজনীয় নানা কাগজ।

‘তবে খামের গায়ে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা ছিল সেটি কিন্তু প্রমাণিত। যা খুলে আমরা পাইনি। এসব দেখে আমরা নিশ্চিতভাবেই (অববিয়াসলি) হতাশ।’

ইভ্যালির কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে যে সমস্যায় পড়ছেন তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে বড় সমস্যা হলো, ইভ্যালির সার্ভারটি এখন বন্ধ রয়েছে। এই সার্ভারটি পরিচালনা করছে আমেরিকান ভিত্তিক কোম্পানি অ্যামাজনডটক। তারা ইভ্যালির কাছে ছয় কোটি টাকা পায়। এই টাকা না দিলে তারা সার্ভার চালু করতে রাজি নয়।

‘কিন্তু সার্ভার ওপেন করা ছাড়া আমরা কিছু করতেও পারছি না। যখনই আমরা সার্ভার ওপেন করতে পারব, অ্যাকসেস পাব, তখনই ইভ্যালির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারব। কারণ এই সার্ভার ছাড়া কে কত পান, কার কোন মাল, তা কোনোভাবেই চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না।’

বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এখন অ্যামাজনডটকমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তারা ভালো একটা রেসপন্স করেছে। তবে বলেছে সার্ভারে অ্যাকসেস পেতে হলে বোর্ডের এমডিকে আইডেন্টিফাই করতে হবে। এজন্য ইউএস অ্যাম্বাসেতি প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিতে হবে।’

তিনি জানান, ইভ্যালির বিভিন্ন কার্যালয়ে হাজার-হাজার কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যেগুলো ছাড়া অডিট সম্পন্ন করাও সম্ভব না। এসব কাগজপত্র সংগ্রহ করবে অডিট ফার্ম। এ কাগজপত্র জোগাড় করতে অনেক সময় চলে যাবে।

বিচারপতি মানিক বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ও নির্দেশনা হাইকোর্ট যেটি দিয়েছে, তা হলো এই কোম্পানিকে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাওয়া। আইন হলো যখন একটি কোম্পানির দেউলিয়া হয়ে যায় তখন ওই কোম্পানির সম্পদ এবং দেনা সামঞ্জস্য করতে হবে। তারপর দায়-দেনার হিসাব করে যার যা পাওনা আছে তা পরিশোধ করা।

‘তবে হাইকোর্ট এটাও বলেছে যদি কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়, তাহলে সেটি করা উচিত। তবে ইভ্যালির বিষয়ে শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটি এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা সাউথইস্ট ব্যাংকে দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকার সন্ধান পেয়েছি এবং এই টাকাগুলো উত্তোলন করার অনুমতি চেয়েছি। আমরা যদি টাকা উত্তোলন করতে পারি তাহলে এর থেকে গ্রাহকদের কিছু টাকা ফেরত দিতে পারব।

‘এছাড়া আরও দুটি গেটওয়েতে ২৬ কোটি টাকা এবং আরও পাঁচ কোটি টাকা সন্ধান পেয়েছি। এর বাইরে সাভারের দুটি ওয়ারহাউজ এ ও বেশকিছু ইলেকট্রনিক্স আইটেম রয়েছে।’

ইভ্যালির সংকট উত্তরণ বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিন্তু সমস্যা হলো এই টাকা বা পণ্য পরিশোধ শুরু করা হলে তখন চারদিক থেকে গ্রাহকের ভিড় জমান শুরু হবে। সবাই আসবে আমার টাকা দেন আমার টাকা দেন। কিন্তু আমরা তো এখনই দিতে পারছি না কারণ সম্পদের দায়-দেনার হিসেবই আমরা সম্পন্ন করতে পারিনি। ’

ইভ্যালির ২৪টি গাড়ি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে এ পর্যন্ত আমরা পেয়েছি ১৬টা। সেখানে ২-৩টি গাড়ি খুব বিলাসবহুল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই গাড়িগুলো প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করব। বাকি গাড়িগুলো আমরা ভাড়া দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছি।

‘কারণ গত তিন মাসে এ বিলের অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে গিয়ে ৩০জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিতে হয়েছে। তাদের বেতনের ব্যাপার আছে বাড়ি ভাড়ার বিষয় আছে।’

ইভ্যালির বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারার অভিযোগ ছিল অনেক দিন ধরে। এসবের মধ্যেই গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এরপর গুলশান থানায় করা অর্থ আত্মসাৎ মামলায় তাদের তিন দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। এই মামলায় রিমান্ড শেষে ধানমন্ডি থানায় করা অর্থ আত্মসাতের অপর এক মামলায় রাসেলকে ফের রিমান্ডে পাঠানো হয়। আসামি দুজনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর