আয়ারল্যান্ডের কাছ থেকে ভাড়ায় নেয়া বোয়িং-৭৩৭ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এরইমধ্যে উড়োজাহাজ দুটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান সেলেসটিয়াল এভিয়েশন ট্রেডিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিও চূড়ান্ত হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে এই দুটি উড়োজাহাজ ভাড়ায় এনে বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছিল বিমান। এই দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ার ফলে বিমান বাংলাদেশের বহরে উড়োজাহাজ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮ তে।
এর আগেও ভাড়ায় আনা একটি ড্যাশ এইট মডেলের উড়োজাহাজ কিনেছিল বিমান।
বিমান কর্মকর্তারা জানান, উড়োজাহাজ দুটি কিনতে বিমানের খরচ হচ্ছে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা। বিমানের নিজস্ব অর্থায়নে কেনা হচ্ছে এই দুটি উড়োজাহাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে সেলেসটিয়াল এভিয়েশনের সঙ্গে বিমান চু্ক্তি করেছে। উড়োজাহাজ দুটির প্রত্যেকটির দাম ধরা হয়েছে ৯৭ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ ডলার করে। বাংলাদেশি টাকায় এর দাম দাঁড়াবে প্রায় ৮৩ কোটি ৯৮ লাখ ২৭ হাজার টাকার মতো।’
উড়োজাহাজ দুটি বর্তমানে বিমানের বহরেই রয়েছে। শিগগিরই এগুলোর মূল্য পরিশোধ করে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৩৭ সাধারণত মধ্য পাল্লার দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়। বোয়িংয়ের জনপ্রিয় উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে এটি একটি।
এই মডেলের এ দুটি উড়োজাহাজ ছাড়াও বিমানের বহরে নিজস্ব আরো দুটি বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজ রয়েছে। এ নিয়ে এই মডেলের উড়োজাহাজের সংখ্যা হবে চারটি।
সাধারণত এয়ারলাইন্সগুলো দুটি পদ্ধতিতে উড়োজাহাজ ভাড়ায় এনে থাকে। একটি ওয়েট লিজ আরেকটি ড্রাই লিজ। ওয়েট লিজ পদ্ধতিতে স্বল্প মেয়াদে উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে উড়োজাহাজের ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা থাকে লিজ দাতা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে। এ পদ্ধতিটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল।
ড্রাই লিজ পদ্ধতিতে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়া হয়। এ পদ্ধতিতে উড়োজাহাজের ব্যবস্থাপনা থাকে লিজ নেয়া এয়ারলাইন্সের দায়িত্বে। লিজ শেষে উড়োজাহাজটিকে ফেরানোর সময় এটিকে যে অবস্থায় নেয়া হয়েছিল সে অবস্থায় ফেরত দেয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয় এ ধরনের চুক্তিতে।
এ হিসেবে ভাড়ায় থাকা উড়োজাহাজ দুটি কেনার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ‘উড়োজাহাজগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হলে বিমানকে একটি জটিল ও ব্যয়বহুল পদ্ধতির মধ্যে যেতে হবে। এরচেয়ে এগুলো কিনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিমানের আরও ৭৩৭ উড়োজাহাজ কেনা উচিত। আঞ্চলিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য এই মডেলটি অত্যন্ত উপযোগী। এটি দিয়ে বিমান দুবাই পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে।
আঞ্চলিক গন্তব্যে বড় উড়োজাহাজ ব্যবহার না করে মাঝারি আকারের এই ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহার করলে তা অর্থনৈতিকভাবে বিমানের জন্য লাভজনক হবে।’
এ উড়োজাহাজ দুটি কেনার আমদানি অনুমতির জন্য রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় চিঠিতে বলেছে, বোয়িং উড়োজাহাজ দুটি ২০০১ সালে তৈরি করা ও ২০০৯ সাল থেকে ড্রাই লিজে বিমান বহরে যুক্ত আছে, তাই পুরনো হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব অর্থ দিয়ে উড়োজাহাজ দুটি কেনা হবে। এছাড়া উড়োজাহাজ দুটির জন্য এরই মধ্যে সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে ইন্স্যুরেন্স পলিসি নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কারিগরি ছাড়পত্রও পাওয়া গেছে।