বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একটানা টিভি দেখবেন না, সাবধান!

  •    
  • ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ১৬:১৪

দীর্ঘ সময় টিভি দেখলে শরীরে অচলাবস্থা তৈরি হয়, আর এ কারণেই বাড়ে রক্ত জমাটের ঝুঁকি। যখন আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি সংকুচিত অবস্থানে জাঁকিয়ে বসে থাকছেন, তখন দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত ​​​​জমাট বাঁধতে পারে। এ ছাড়া অনেকে টিভি দেখার সময় বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, যা স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।

সন্ধ্যা হলেই টেলিভিশন খুলে সিরিয়াল দেখায় ডুবে যাচ্ছেন? বাবা-মায়ের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে সন্তান একটানা টিভি পর্দায় চোখ আটকে রাখছে?

এমনটি ঘটলে সতর্ক হোন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একটানা দীর্ঘ সময় ধরে টেলিভিশন দেখার ফল হতে পারে বিপজ্জনক। গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি আপনাকে জীবনহানির মুখেও ফেলতে পারে।

ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টলের গবেষকদের দাবি, একটানা টিভি দেখায় শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তারা দেখেছেন, দিনে যারা একটানা চার ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে টিভি দেখেন তাদের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি অনেক বেশি। দিনে যারা টানা আড়াই ঘণ্টা টিভি দেখেন তাদের চেয়ে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করা দর্শকের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ বেশি।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটি চলতি মাসেই প্রকাশিত হয়েছে ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজিতে।

গবেষণায় টানা টেলিভিশন দেখার সঙ্গে ভেনাস থ্রম্বোইম্বোলিজমের (ভিটিই) সম্পর্ক পরীক্ষা করা হয়েছে। ভিটিই শিরায় রক্ত জমাট বাঁধাসংক্রান্ত একটি রোগ। লক্ষণ তীব্র নয় বলে এটি সাধারণত কম শনাক্ত হয়। তবে চিকিৎসা না হলে এটি পক্ষাঘাত, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ভিটিই-এর মধ্যে রয়েছে পালমোনারি এম্বোলিজম (ফুসফুসে রক্ত ​​জমাট বাঁধা) এবং ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (সাধারণত পাশের শিরায় রক্ত ​​জমাট বাঁধা, যা ফুসফুসে পরিবাহিত হয়ে পালমোনারি এম্বোলিজম ঘটাতে পারে)।

গবেষণা পরিচালনার জন্য ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এর আগে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রমাণ পর্যালোচনার পাশাপাশি সেগুলোর বিশ্লেষণে মেটা-অ্যানালাইসিস নামের একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছেন।

এ-সংক্রান্ত গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ব্রিস্টল মেডিক্যাল স্কুলের ড. সেতর কুনুসর বলছেন, ‘একটি মেটা-অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে একাধিক গবেষণার সংমিশ্রণ আমাদের একটি বড় নমুনা পেতে সাহায্য করেছে এবং ফলাফলকে আরও সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।’

ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণে ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী মোট ১ লাখ ৩১ হাজার ৪২১ জনের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। এ-সংক্রান্ত তিনটি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করার সময়ে তাদের কারও ভিটিই-সংক্রান্ত জটিলতা ছিল না।

গবেষণায় এসব ব্যক্তির প্রতিদিন টেলিভিশন দেখায় ব্যয় করা সময় বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর প্রতিদিন কমপক্ষে চার ঘণ্টা টিভি দেখা এবং মাঝেমধ্যে টিভিতে চোখ রাখা দর্শকদের (প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টার কম টিভি দেখা) দুটি শ্রেণিতে আলাদা করেন গবেষকেরা।

বিজ্ঞানীরা যে তিনটি গবেষণার ফলোআপ তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন সেগুলোর সময়কাল ছিল ৫ বছর ১ মাস থেকে ১৯ বছর ৮ মাস। এ সময়ের মধ্যে ৯৬৪ জনকে ভিটিই আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। দেখা গেছে, যারা কম টিভি দেখেন তাদের চেয়ে চার ঘণ্টা বা তার বেশি সময় টেলিভিশন দেখা ব্যক্তিদের ভিটিইতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা ১.৩৫ গুণ বেশি।

গবেষণায় বয়স, লিঙ্গ, বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) এবং শারীরিক সক্রিয়তা নির্বিশেষে সবার তথ্য নেয়া হয়েছে।

ড. কুনুসর বলছেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক সক্রিয়তা, বিএমআই, বার্ধক্যের পাশাপাশি রক্ত ​​​​জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় টেলিভিশনে চোখ রাখাও দায়ী।’

‘আমরা দেখেছি, শারীরিক সক্রিয়তা বাড়ালেও দীর্ঘক্ষণ টিভি দেখার ফলে তৈরি রক্ত ​​​​জমাট বাঁধার ঝুঁকি দূর হয় না।’

তাহলে উপায় কী- সে পরামর্শও দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ড. কুনুসর বলছেন, ‘অতিরিক্ত টিভি দেখলে অবশ্যই আপনাকে মাঝেমধ্যে বিরতি নিতে হবে। প্রতি ৩০ মিনিটে একবার আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে খানিকটা হাঁটাচলা করুন। আর অবশ্যই টেলিভিশন দেখার সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার মুখে পোরার অভ্যাস ত্যাগ করুন।’

বেশি টিভি দেখলে রক্ত জমাট বাঁধার কারণ কী- সে বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা।

ড. কুনুসর বলেন, ‘দীর্ঘ সময় টিভি দেখলে শরীরে অচলাবস্থা তৈরি হয়, আর এ কারণেই বাড়ে রক্ত জমাটের ঝুঁকি। যখন আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি সংকুচিত অবস্থানে জাঁকিয়ে বসে থাকছেন, তখন দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত ​​​​জমাট বাঁধতে পারে। এ ছাড়া অনেকে টিভি দেখার সময় বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, যা স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। এটাও রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ায়।’

একইভাবে একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার ঝুঁকি সম্পর্কেও সতর্ক করছেন ড. কুনুসর।

এ বিভাগের আরো খবর