বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমি আর আলু আবাদ করব না’

  •    
  • ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ১৪:২১

কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছর আলু আবাদ করে ৫ লাখ টাকা লোকসান করছি আমি। তাই এ বছর আর আলু চাষ করি নাই। এ বছর আমার আশপাশের অনেকে আলু চাষ করেছে। তারা সবাই লোকসানে পড়েছে। এসব দেখে আমি আর আলু আবাদ করব না। যে ফসলে আমার লাভ হবে, সে ফসল করব।’

‘গত বছর আলু আবাদ করে ৫ লাখ টাকা লোকসান করছি আমি। তাই এ বছর আর আলু চাষ করি নাই। এবার আমি ভুট্টা লাগাইছি; ফলনও ভালো হয়েছে। এ বছর আমার আশপাশের অনেকে আলু চাষ করেছে। তারা সবাই লোকসানে পড়েছে। এসব দেখে আমি আর আলু আবাদ করব না। যে ফসলে আমার লাভ হবে, সে ফসল করব।’

নিজের এলাকায় আলু চাষ নিয়ে ঠিক এভাবেই আক্ষেপের কথা বলছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান। শুধু মোস্তাফিজুরই নয়, গত বছর আগাম আলু আবাদ করে বিপুল লোকসানের পর এবারও একই দশা হওয়ায় তার মতো আলুর আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন এ জেলার অনেক কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে আগাম আলু আবাদে উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে এখন দাম কম। আগাম আলুর এ মৌসুম শেষ হলেই আলুর দাম বাড়বে।

জেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে ক্যারেজ জাতের আলু ৭ টাকা, গ্যানেলা জাতের ৪ থেকে ৫ টাকা, দেশি সাদা আলু ৪ থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এসব আলুর বীজ কৃষকদের কিনতে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।

প্রতি বিঘা জমিতে ক্যারেজ আলু আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ কেজি পর্যন্ত। বীজ বপন, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, কৃষাণ খরচ ও পানি দেয়া; সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু আলু তোলার পর বিক্রি করে হিসাবের খাতা মেলাতে চাষিদের মাথায় হাত। লাভ দূরে থাক, খরচ তুলতেই দিশেহারা তারা।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত আগাম আলু রোপণ হয়েছে ৪৭ হজার ৫০২ হেক্টর জমিতে।

নিউজবাংলাকে বড়ইল মিরাজপাড়ার কৃষক জাহির হোসেন বলেন, ‘এক মণ বীজ নিয়ে ১২ শতক জমিতে আলু আবাদ করেছি। কিন্তু কামলা, ডিজেল, কীটনাশকসহ বিভিন্ন খরচের কারণে আলুর লাভ হবে না। উল্টো লোকসান হবে।’

দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কায় কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আলুর দাম যদি আরও কমে যায়, তাই বাধ্য হয়ে কম দামে পাইকারের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। এখন এই জমিতে অন্য ফসল করব।’

আলুতে গত বছর লোকসানের পর এবারও একই দশার কথা জানালেন কর্ণাই গ্রামের কৃষক সুমন চন্দ্র। বলেন, ‘এ বছর ৪০ বিঘা জমিতে আলু করেছি। বিঘাপ্রতি সার, ডিজেল, কীটনাশক, কামলাসহ ৬০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। আলুর একটু দাম পেলে ভালো হতো।

‘কিন্তু বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা, তাতে আগামীতে আর আলু লাগাতে পারব না। গত বছর আলুর দাম কম থাকায় ৫ লাখ টাকা লোকসান করেছিলাম। এ বছর লোকসান হলে আমার আর করার কিছুই থাকবে না।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মাহবুবুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে অধিকাংশ কৃষক আগাম জাতের আলু আবাদ করেছে। ফলে উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম কম।’

দাম আরও কমার আশঙ্কায় চাষিরা আলু কম দামে বিক্রি করার কথা জানালেও এ কর্মকর্তার দাবি, আগামী সপ্তাহে আলুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বলেন, ‘বাজারে গ্যানোলা জাতের আলু ৫ থেকে ৬ টাকা, আর অন্যান্য জাতের ৮ থেকে ৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আসলে এক কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকদের ৭ থেকে ৮ টাকা খরচ হয়। এই আলুটা কৃষকরা যদি আরও কিছুদিন সংরক্ষণ করে তাহলে পরবর্তী সময় দাম বেশি পাবে। আর এই আগাম আলুর মৌসুম শেষ হলেই আলুর দাম বাড়বে।

‘মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে আমরা জানতে পেরেছি, আগামী সপ্তাহে আবারও আলুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে যেভাবে আলু আবাদ হয়, তা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন বেশি। আলুর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে তাহলেই আলুর আবাদ সম্প্রসারিত হবে এবং কৃষক লাভবান হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর