বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওমর ফারুকের যন্ত্রে ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ

  •    
  • ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ০৮:২৬

ওজোপাডিকো এর সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ‘ওমর ফারুক সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, এটাকে বলা হয় “টাইডাল পাওয়ার” প্রযুক্তি। এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।’

নদীর ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যু উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাগেরহাটের মোংলায় শেলাবুনিয়া গ্রামের ওমর ফারুক। দীর্ঘ দুই বছর গবেষণা করে পরীক্ষামূলক একটি প্রোটোটাইপ (ক্ষুদ্র সংস্করণ) তৈরি করেছেন তিনি, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গোপ ওয়েভ ফ্রেস এনার্জি’।

এরই মধ্যে তার এ যন্ত্র বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ওমর ফারুক দাবি করছেন, বড় পরিসরে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে কোনো ধরনের জ্বালানি খরচ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

শেলাবুনিয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক সালাম শেখ বলেন, ‘ওমর ফারুক খুবই মেধাবী ছেলে। তার বাবা ইউনুস আলী মারা যাওয়ার পর ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারেনি। তবে ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করেছি, তার বিদ্যুৎ নিয়ে আগ্রহের বিষয়টি। দীর্ঘদিন চেষ্টার ফলে সে যে যন্ত্রটি তৈরি করেছে, তা দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে সে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। আমি সরকারের কাছে দাবি করি, ওমর ফারুককে স্বীকৃতি দিয়ে তার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হোক।’

ওমর ফারুকের প্রতিবেশী আলী আজম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে কাজ করে মেশিনটি তৈরি করেছে ওমর ফারুক। আমি দেখেছি, মোহনার নদীর ঢেউ বা স্রোত থেকে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বলতে। বড় পরিসরে কাজটি করার জন্য সরকারিভাবে তাকে যদি সহায়তা করা হয়, তবে আরও ভালো কিছু দেখাতে পারবে সে।’

শেলাবুনিয়া গ্রামের সম্পা রানী দাস বলেন, ‘আমাদের শেলাবুনিয়া গ্রামের ছেলে ওমর ফারুক সমুদ্রের ঢেউ থেকে খুব সুন্দরভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করেছে। আমি চাই সরকারি সহায়তার মাধ্যমে সে সামনের দিকে এগিয়ে যাক এবং আরও ভালো কিছু করুক।’

সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ প্রযুক্তিকে বলা হয় টাইডাল পাওয়ার প্রযুক্তি। ছবি: নিউজবাংলা

ওমর ফারুক জানান, ছোটবেলা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে আগ্রহ ছিল তার। এ থেকে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর ডিপ্লোমা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার। তবে মনের ভেতর স্বপ্ন পূরণের আকাঙ্ক্ষা ছিল। এ কারণে বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোর্সে অধ্যয়ন করছেন তিনি।

সমুদ্রের ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দেখে প্রায় দুই বছর চেষ্টা করে পরীক্ষার জন্য এই প্রোটোটাইপ তৈরি করেছেন তিনি। এটি নির্মাণে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

এটি ব্যয়বহুল কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এটা ব্যয়বহুল মনে হলেও মূলত এটি তা নয়। আমাদের দেশে যে কয়টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে, তা অনেক ব্যয়বহুল। কারণ এগুলো চালাতে জ্বালানির প্রয়োজন হয়। সেদিক বিবেচনা করলে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু নির্মাণ ব্যয় হিসাব করে বছরের পর বছর ধরে কোনো ধরনের জ্বালানি ব্যয় ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার যদি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তাহলে সাধারণ মানুষ অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ পাবে। এ ছাড়া এই ওয়েব পাওয়ার প্লান্টে কোনো কার্বন তৈরি হয় না, তাই প্রকৃতির কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। এটা সমুদ্রের প্রাণীদের ওপর লক্ষ রেখে ডিজাইন করা, ফলে সামুদ্রিক কোনো প্রাণীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।’

বাগেরহাট ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ‘ওমর ফারুক সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন, এটাকে বলা হয় 'টাইডাল পাওয়ার' প্রযুক্তি। এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আমাদের দেশেও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আরও গবেষণা ও সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে ওমর ফারুকের এই প্রযুক্তি যদি ব্যবহার করা যায়, তবে দেশের সমুদ্রের তরঙ্গকে বাণিজ্যিক সম্পদে রূপান্তরিত করা যাবে। আর এটি যদি সম্ভব হয়, তবে টাইডাল ও ওয়েভ এনার্জির মাধ্যমে আমাদের দেশ বিদ্যুতে শতভাগ স্বনির্ভরতা অর্জন করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর