ইতালি যাওয়ার সময় ঝড়োবাতাস ও প্রচণ্ড ঠান্ডায় তিউনিউসিয়ার ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারিয়েছেন বাংলাদেশের সাত যুবক।
এই সাতজনের মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুরের। এ ছাড়া অন্য দুজনের বাড়ি যথাক্রমে সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে।
রোববার ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নিহতদের নাম পরিচয় প্রকাশের পর থেকেই শোকের মাতম চলছে তাদের পরিবারে।
মাদারিপুরের নিহত পাঁচজন হলেন, সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামের শাজাহান হাওলাদারের ছেলে ইমরান হোসেন, মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড় গ্রামের শাহাজালালের ছেলে জহিরুল, ঘটকচর এলাকার কাশেম মোল্লার ছেলে সাফায়েত, পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি গ্রামের প্রেমানন্দ তালুকদারের ছেলে জয় তালুকদার রতন।
বাপ্পী নামে নিহত আরেকজনের বাড়ি সদর উপজেলা লেখা থাকলেও এখনও তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিহতদের বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে তাদের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। নিহত জহিরুলের বাবা শাহাজালাল বলেন, ‘আমার সন্তানের মারা যাওয়ার খবর আমরা সরকারি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারলাম। প্রায় ১০ থেকে ১২ দিন ধরে আমার ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয় না। দালালরা আমাদের কাছে ফোন করে বলেছে জহিরুল হাসপাতালের আইসিইউতে আছে। যদি আমার সন্তান মারা যায়, তা হলে তার লাশ যেন সরকার আমাদের কাছে এনে দেয়।’
নিহত ইমরান হোসেনের বোন বলেন, ‘গত ২১ জানুয়ারির আগে ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে ইমরানের কথা শুনি। তারপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই। আমার ভাই মারা যাওয়ার কথা সরকারি চিঠির মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমার বাবা-মা এখন পর্যন্ত জানে না।’
নিহত সাফায়েতের বোনের স্বামী রাসেল বলেন, ‘সাফায়েত মারা যাওয়ার কথা আমি শুনেছি। সাফায়েতের সঙ্গে যাওয়া বাড়ির পাশের দুই জন জীবিত আছে। তারা ফোন করে আমাদের বলেছে সাফায়েত মারা গেছে।’
দূতাবাসের চিঠি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে অতিরিক্ত ঠান্ডায় মারা যাওয়া ৭ বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্তে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
পরে জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে মৃতদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় ওই কমিটি।
সরকারি খরচে মরদেহগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা প্রশাসক কিংবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে দূতাবাসের চিঠিতে।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘যেসব অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছেন তাদের মরদেহ যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা নেব। আর যারা অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন, তাদের সচেতন হতে হবে। দালালদের ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।’