বাংলাদেশ রেলওয়েতে রানিং স্টাফদের মাইলেজ ইস্যুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিল দাবিতে অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতির কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে দাবি মেনে নেয়ার লিখিত আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনরত কর্মচারীরা।
রোববার রেল ভবনে বৈঠক শেষে রাত ৮টায় রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘রেল সচিবের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের লিখিত আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এজন্য আগামীকাল সোমবার থেকে আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।’
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, বৈঠকে উপস্থিত রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্যপরিষদের নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবিরের সই করা দুটি লিখিত আশ্বাস দেয়া হয়। এতে তারা আন্দোলন স্থগিত করতে সম্মত হয়।
রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের দাবি-দাওয়াগুলো গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেব। আমাদের আশ্বাসে তারা তাদের পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে।’
রেল কর্তৃপক্ষের দেয়া আশ্বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা আগের মতো বহাল রাখতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেবে। এছাড়া গত বছরের ৩ নভেম্বরের আগে যেসব রানিং স্টাফ অবসরে গেছেন তাদের আগের নিয়ম অনুযায়ী পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এর আগে বিকেলে ৪টায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রেলওয়ের রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্যপরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষ হয় রাত পৌনে ৮টায়।
বৈঠকে রেল সচিব রেলের উন্নয়নে সব কর্মচারীর অবদানের কথা তুলে ধরে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তিনি রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
এক পর্যায়ে ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান বলেন, ‘অতীতে আমাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে নানা ধরনের আশ্বাস পেয়েছি। এবার আমরা লিখিত আশ্বাস চাই।’
এর আগে মুজিবর রহমান বলেছিলেন, ‘প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আগের নিয়মে মাইলেজ সুবিধা ও বেতন-ভাতা দিতে হবে। অন্যথায় আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাব আমরা।’
ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), গার্ড ও টিকিট চেকার (টিটি), ট্রেন পরিচালক ও ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) বলা হয় রানিং স্টাফ।
জনবল সংকটে রানিং স্টাফরা সাধারণত ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা টানা কাজ করেন। রেলওয়ে রানিং স্টাফদের যে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে তা মাইলেজ নামে পরিচিত। এই সুবিধায় প্রতি ৮ ঘণ্টার জন্য এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা পান তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৮৬২ সালের আইন আজও বলবৎ রয়েছে। সে অনুযায়ী ট্রেনচালক, সহচালক, পরিচালক ও টিকিট চেকাররা বিশেষ এই আর্থিক সুবিধা পেয়ে আসছেন।
তবে গত বছরের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রানিং স্টাফরা এতদিন ধরে পেনশনে মাইলেজের জন্য যে অতিরিক্ত ভাতা পেতেন তা আর পাবেন না।
এরপর পেনশনে মাইলেজ ভাতা অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন রানিং স্টাফরা। এর অংশ হিসেবে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে তারা ৮ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করা থেকে বিরত থাকছেন।