ইতালিতে ঠান্ডায় মারা যাওয়া সাত বাংলাদেশির নাম জানা গেছে। তবে মৃতদের সঙ্গে শনাক্ত করার মতো কোনো ডকুমেন্ট না থাকায় মরদেহ দেশে পাঠাতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে কাজ করছে সরকার।
ইতালির রোমে বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘গত ২৫ জানুয়ারি ইতালিতে সংঘটিত মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহত সাত কথিত বাংলাদেশি নাগরিকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
‘ইতালি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মৃত্যুবরণকারীদের কোনো পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।’
এদিকে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধি দল উদ্ধারকৃতদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মৃত্যুবরণকারীদের প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে।
তাদের মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুরের। তারা হলেন ইমরান হোসেন, রতন/জয়, সাফায়েত, জহিরুল ও বাপ্পি। অন্য দুজন হলেন সুনামগঞ্জের সাজ্জাদ ও কিশোরগঞ্জের সাইফুল।
দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মৃতদের পরিচয় শনাক্ত করার স্বার্থে পরিবারের সদস্যদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় অথবা রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জানায়, একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি উপকূলে পৌঁছানোর পর এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাথমিক তথ্যমতে, অভিবাসনপ্রত্যাশী ২৮৭ জনের মধ্যে ২৭৩ জন ছিলেন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে সাতজন মারা গেছেন। অন্যরা মিসরীয় নাগরিক।
মরদেহগুলো ইতালির সিসিলি প্রদেশের এগ্রিজেন্তো এলাকায় অবস্থিত মর্গে রাখা আছে। লাশ ফেরত পাঠানো বা দাফন সম্পাদনের আগ পর্যন্ত মর্গে রাখা হবে বলে জানা গেছে এবং মরদেহ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মৃতদের সঙ্গে শনাক্ত করার মতো কোনো ডকুমেন্ট না থাকায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। সবার মরদেহ সরকারি খরচে বাংলাদেশে পাঠাতে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
‘দীর্ঘ সময় তীব্র ঠান্ডায় থাকার কারণে হাইপোথার্মিয়ায় কথিত সাত বাংলাদেশি নাগরিক মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর থেকেই ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আদালতের অনুমতির বাধ্যবাধকতা থাকায় এখনও সরেজমিন মর্গে গিয়ে মরদেহগুলো দেখা সম্ভব হয়নি। তবে প্রক্রিয়া চলমান।’
দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রমকল্যাণ) এরফানুল হকের নেতৃত্বে ও দূতাবাসের একজন ইতালিভাষী কর্মচারী দুর্ঘটনার পরদিন ২৬ জানুয়ারি লাম্পেডুসা দ্বীপে পৌঁছান।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে জীবিত উদ্ধারকৃতদের বিভিন্ন এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে এবং দূতাবাসের প্রতিনিধি দল তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। ইতালির কাতানিয়া ও পালেরমোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারি কনসালদের মাধ্যমেও দূতাবাস প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধান এবং যথোপযুক্ত করণীয় নির্ধারণে কাজ করে যাচ্ছে।
কাউন্সেলর এরফানুল হক ২৭ জানুয়ারি লাম্পেডুসার ডেপুটি মেয়র প্রেস্টিপিনো সালভাতোরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তারা দুর্ঘটনার বিষয় ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করণীয় কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা করেন।
শুক্রবার কোস্টগার্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দূতাবাসের প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে।