নওগাঁর একটি ইউনিয়নে সহিংসতায় স্থগিত হওয়া নির্বাচনে পুনঃভোটের উদ্যোগ নেয়ার পর এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ভোটারদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে বলার পাশাপাশি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তিনি। নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই অভিযোগ স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘যা পারেন করেন।’
গত ৫ জানুয়ারি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পাঁচ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত রাখা হয় সহিংসতার কারণে। এসব কেন্দ্রে আবার ভোট নেয়া হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি।
সেখানে ভোটের প্রস্তুতির মধ্যে ঘোষনগর ইউনিয়নে ছাত্রলীগ নেতা নাঈম ইসলাম দুর্জয়ের একটি ফেসবুক পোস্ট তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে।
দুর্জয় লিখেছেন, ‘আগামী ৭ তারিখে ভোট হবে শুধুমাত্র নৌকা মার্কার জন্য। নৌকা ছাড়া ঘোড়া মার্কার বা স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি কোনো বাপের বেটা থাকে, তাহলে কেন্দ্রে এসে দেখো। হ্যাঁ আবার বলছি, শুধু নৌকা মার্কারই ভোট হবে। নৌকাতে ভোট নেব, নৌকাতে ভোট না দিলে কেউ কেন্দ্রে আসবি না, রিসোর্টে বউ নিয়ে ঘুরে বেড়াবি আর বাপের বেটা হলে কেন্দ্রে আইসা দেখিস।’
পোস্টদাতা ছাত্রলীগ নেতা নাঈম ইসলাম দুর্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনেকটাই বেপরোয়া কথা বলেন। তার প্রতিক্রিয়া ছিল এমন: ‘হ্যাঁ আমি পোস্ট করেছি। আপনি কী করবেন, যান করেন।’ তিনি বলেন, ‘নৌকার বিপক্ষে যারা, তারা দেশদ্রোহী। নৌকার বিপক্ষে যারা ভোট দেবে, তাদের কেন্দ্রে আসার দরকার নাই। সে জন্য আগামী ৭ তারিখে শুধু নৌকাতেই ভোট হবে।
এই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার পর ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার বলছেন, ৫ জানুয়ারি সহিংসতার ঘটনায় মামলার কারণে পুলিশের ভয়ে অনেকেই এলাকায় থাকতে পারছেন না। এমন সময় এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই অবস্থায় তাদের নিরাপত্তা কে দেবে।
পোস্টদাতা ছাত্রলীগ নেতা নাঈম ইসলাম দুর্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনেকটাই বেপরোয়া কথা বলেন। তার প্রতিক্রিয়া ছিল এমন: ‘হ্যাঁ আমি পোস্ট করেছি। আপনি কী করবেন, যান করেন।’
তিনি বলেন, ‘নৌকার বিপক্ষে যারা, তারা দেশদ্রোহী। নৌকার বিপক্ষে যারা ভোট দেবে, তাদের কেন্দ্রে আসার দরকার নাই। সে জন্য আগামী ৭ তারিখে শুধু নৌকাতেই ভোট হবে।’
পত্নীতলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, যদি কেউ এই ধরনের পোস্ট করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
নৌকায় যারা ভোট দেবেন না, তারা কেন দেশদ্রোহী হবেন- এমন প্রশ্নে দুর্জয় বলেন, ‘আপনি এসব বিষয়ে এত মাথা না ঘামিয়ে চুপ থাকেন।’
দুর্জয় ছাত্রলীগের সদস্য বলে জানিয়েছেন ঘোষনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘নাঈম ইসলাম দুর্জয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আগামীতে হয়তো রাজনীতির কর্মপরিধির কারণে ভালো পজিশনে আসতেও পারে।’
দুর্জয় ফেসবুকে যা লিখেছেন, আপনি সেটির পক্ষে কি না- এমন প্রশ্নে মেহেদী হাসান বলেন, ‘তার ফেসবুকে পোস্টের বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই।’
পরে পোস্টের কথা জানালে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আসলে এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না, খোঁজ নিতে হবে। এমন পোস্ট যদি দিয়ে থাকে তবে সে ঠিক করেনি।’
এই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডের ভোটে বিদ্রোহী প্রার্থী ফারজানা এগিয়ে আছেন। তার ঘোড়া মার্কায় ভোট পড়েছে ৭ হাজার ১০২টি। আওয়ামী লীগের নৌকায় পড়েছে ৬ হাজার ৯৮৮ ভোট।
ভোটারদেরকে হুমকি দিয়ে ছাত্রলীগ নেতার পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দীক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা নাইম এর ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে আমার জানা নেই । যদি সে সতন্ত্র প্রার্থী বা ভোটার বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে থাকে, তবে ঠিক করেনি। এর বেশি কিছু বলার নেই আমার।’
পত্নীতলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, যদি কেউ এই ধরনের পোস্ট করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গত ৫ জানুয়ারি নওগাঁয় সাপাহার, পোরশা ও পত্নীতলা উপজেলায় ২৩টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছিল। এর মধ্যে পত্নীতলায় চারটি ইউনিয়নে ভোট স্থগিত হয়। ঘোষনগর ছাড়া অন্য কেন্দ্রগুলো হলো পত্নীতলা সদর কৃষ্ণপুর ও আকবরপুর।
ভোটারদেরকে হুমকি দিয়ে ছাত্রলীগ নেতার পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দীক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা নাইম এর ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে আমার জানা নেই । যদি সে সতন্ত্র প্রার্থী বা ভোটার বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে থাকে, তবে ঠিক করেনি। এর বেশি কিছু বলার নেই আমার।
ঘোষনগরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিককে চ্যালেঞ্জ করেছেন দলের মনোনয়ন না পেয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী ফারজানা পারভীন।
সেদিন ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রে সহিংসতা হলে ভোট স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়।
ওইদিন সন্ধ্যায় ঘোষনগর ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামের দুটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা না দিয়ে ব্যালট বাক্স উপজেলায় নিয়ে যেতে চায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা পারভীনের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের দুটি গাড়ি ও ভোটের সরঞ্জামে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ ঘটনায় ফারজানা পারভীনসহ ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও আড়াই হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। পরে ফারজানা ও তার স্বামী মতিউর রহমানসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এখনও কারাগারে।
এই ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডের ভোটে বিদ্রোহী প্রার্থী ফারজানা এগিয়ে আছেন। তার ঘোড়া মার্কায় ভোট পড়েছে ৭ হাজার ১০২টি। আওয়ামী লীগের নৌকায় পড়েছে ৬ হাজার ৯৮৮ ভোট।
সেদিন সহিংসতা হওয়া কমলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দিতে পারে। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৫৬১ জন।