অসচ্ছল, প্রতিবন্ধী ও বিচারহীনতাভোগীদের জন্য ভোটের মাঠে দাঁড়িয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দৃষ্টিহীন রবিউল আলম।
আগামী ৩১ জানুয়ারির ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে নবীনগর উপজেলার কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তালা প্রতীকে মেম্বার পদে নির্বাচন করছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, অন্ধ হলেও মেধাসম্পন্ন একজন সফল মানুষ রবিউল। অন্যের বোঝা না হয়ে নিজেই নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। পাশাপাশি নানা সেবামূলক কাজেও তিনি যুক্ত। ভোট সুষ্ঠু হলে রবিউল জয় পাবেন।
পরিবারের লোকজন জানান, ১৩ বছর বয়সে টাইফয়েডে ভোগেন রবিউল। তখন নবম শ্রেণিতে পড়তেন। টাইফয়েডে রবিউল তার চোখ দুটি হারান। কিন্তু থামেননি তিনি।
মেধা আর পরিশ্রমে আয়ত্ত করেছেন হারমোনিয়াম, তবলাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানোর কৌশল। কিশোর বয়স থেকে এভাবেই গান-বাজনার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন তিনি।
তবে বাধা পেরোনোর গল্পও আছে। কিশোর থেকে যুবক পর্যন্ত অন্ধত্বের কারণে অনেক ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছেন রবিউল।
নিউজবাংলাকে রবিউল বলেন, ‘২০০৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর অন্ধদের নিয়ে কাজ করা একটি এনজিওতে চাকরি নিই। দীর্ঘদিন চাকরি করে যা আয় করেছি, তা দিয়ে কাউতলা বাজারে একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান দিই।’
রবিউল আরও বলেন, ‘গ্রামের অনেক প্রতিবন্ধী সমাজে মূল্যায়ন পায় না। এ বিষয়টি মনের ভেতর আমাকে কুরেকুরে খায়। তা ছাড়া আমাদের গ্রামের কোনো অনিয়মের বিচার সুষ্ঠুভাবে হয় না। গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতেই এবার নির্বাচন করছি।
‘শুরুতে অন্ধ মানুষ কীভাবে জনপ্রতিনিধি হবে, সে বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছিল। কিন্তু এখন তেমন দেখা যায় না। গ্রামের মানুষের কাছে ভোট চাইতে গেলে তারা আশ্বাস দিচ্ছেন।’
প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থী মো. ফারুক বলেন, ‘দৃষ্টিহীন রবিউলসহ আমরা চারজন প্রার্থী হয়েছি। সবাই যোগ্য প্রার্থী। জনগণ যাকে ভালো মনে করবে, তাকেই নির্বাচিত করবে।’
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন সবার জন্য। রবিউল নির্বাচনে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন। তাই তারা আজ কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’